আচ্ছা, অ্যাংরি বার্ডস খেলোনি, এমন কেউ কি আছো, বলোতো? গেইমটি শুধু যে সবার
পছন্দের, তাই-ই না, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল গেইমগুলিরই
একটি এই অ্যাংরি বার্ডস। আর গেইমটি শুধু যে মোবাইলেই খেলা যায়, তা-ও নয়।
তুমি চাইলে তোমার পিসিতেও এই গেইমটি খেলতে পারো। কাকে কী বলছি! তুমি তো মনে
হয় রোজই গেইমটি খেলো, আর মায়ের কাছে বকুনি খাও, তাই না?

মজার এই গেইমটা কারা বানিয়েছে জানো? ফিনিশ, মানে ফিনল্যান্ডের গেইম ডেভেলপার কোম্পানি রোভিও এন্টারটেইনমেন্ট। ভাবছো, তা না হয় হলো, কিন্তু পাখিগুলোর ডানা-ই বা কই? আর ডানাছাড়া পাখির আইডিয়াটাই বা কোত্থেকে এলো? ডানাছাড়া এই পাখিগুলোর আইডিয়াটি আসে মূলত একটি স্কেচ থেকে। আর ডানাছাড়া পাখিদের এই গেইমটি এখন কী পরিমাণ জনপ্রিয় বলতে পারো? দাঁড়াও, বলছি। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে গেইমটি কতোবার ডাউনলোড করা হয়েছে জানো? প্রায় ১০০ কোটি বার! গেইমটি তুমি তোমার ভাইয়া বা আপুর আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে খেলতে পারবে। আর আগেই তো বলেছি, চাইলে তোমাদের বাসার কম্পিউটারটিতেও খেলা যাবে মজার এই গেইমটি।

এবার গেইমের গল্প করা যাক, কী বলো? প্রথমেই এর চরিত্রগুলোর সাথে একটু পরিচিত হয়ে আসি, চলো। ডানাবিহীন এই পাখিগুলোকে কিন্তু আলাদা করে কোনো নাম দেয়া হয় নি। পাখিগুলো তাদের যার যার রঙ দিয়েই পরিচিত। এই ধরো, লাল রঙের পাখিটি হল রেড বার্ড, নীলটি ব্লু বার্ড, হলুদটি ইয়োলো বার্ড, সাদাটি হোয়াইট বার্ড আর কালোটি ব্ল্যাক বার্ড। আর সবুজ রঙের লম্বা ঠোঁট-ওয়ালা যে পাখিটি আছে, ও পরিচিত বুমেরাং বার্ড নামে। ওকে ছুঁড়ে মারা হলে যে ও বুমেরাংয়ের মতো ঘুরে আসতে পারে, তাই। আর আছে সবুজ রঙের সেই দুষ্ট শূকরের দল।

আচ্ছা তাহলে এবার গেমের কাহিনিতে আসা যাক। লাল পাখি, নীল পাখি আর তাদের বন্ধু পাখিদের দিনগুলো বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিলো। রোজ তারা একসাথে তাদের ডিমগুলোতে তা দিতে বসতো আর চুটিয়ে গল্প করতো। কিন্তু জীবন কি আর নির্ঝঞ্ঝাটে কাটে, বলো? একদিন তাদের ডিমগুলোর উপর নজর পড়লো দুষ্ট শূকরদের। শূকরগুলো ষড়যন্ত্র আঁটতে শুরু করলো, কিভাবে পাখিদের ফাঁকি দিয়ে ওদের ডিমগুলো হাতিয়ে নেয়া যায়। সুযোগ বুঝে একদিন তারা ডিমগুলোকে চুরিও করে নিয়ে যায়। পাখিরা যখন বুঝতে পারলো, ওরা তো যাকে বলে রেগে কাঁই! তাই কী আর শুধু রাগ করলেই চলবে? ডিমগুলোকে উদ্ধার করতে হবে না? সেই সাথে দুষ্ট শূকরগুলোকেও আচ্ছা শাস্তি দিতে হবে। আর এখানেই গেইমটির শুরু- দুষ্ট শূকরগুলোকে মেরে-ধরে তাড়িয়ে দিয়ে পাখিদের ডিম উদ্ধার করতে হবে।

তবে গেইমটি যতোটা সহজ মনে হচ্ছে, ততোটা সহজ নয় মোটেই। প্রতিটি লেভেলে তোমাকে কয়েকটি পাখি দেয়া হবে। সেই কয়েকটি পাখি দিয়েই লেভেলের সবগুলো শূকরকে মারতে হবে। সবগুলোকে মারতে পারলে তবেই লেভেল শেষ হবে, আনলক হবে পরের লেভেল।

তবু গেইমটিকে বেশ সহজ মনে হচ্ছে? আচ্ছা, আগে এটাও শুনে নাও- শূকরগুলো কিন্তু তোমার হাতের নাগালেই থাকে না। বেশ দূরে থাকে। পাখিগুলোকে গুলতিতে বসিয়ে তাক করে ছুঁড়ে মারতে হয়। পাখিগুলোকে ছুঁড়ে শূকরগুলোর গায়ে লাগাতে পারলে, তবেই ওরা মরবে।

আর শূকরগুলোও কিন্তু কম দুষ্টু নয়; ওরাও এমনভাবে লুকিয়ে থাকে, ওদেরকে মারাও বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। লেভেলগুলোতে তো শুধু শূকরগুলোই থাকে না, কাঠ, বরফ, পাথর নয়তো কংক্রিটের তৈরি নানা ধরনের কাঠামোও থাকে। এই দুষ্টুরা কী করে জানো, প্রায়ই নানা কাঠামোর আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। তখন ওদেরকে মারতে যে কী কষ্ট হয়!

তোমার কাছে থাকা পাখিগুলোকে দিয়ে যদি লেভেলের সবগুলো শূকরকে মেরে তাড়াতে পার, তবে তো পরের লেভেল আনলক হলো। পাশাপাশি যত বেশি কাঠামো ভেঙ্গে শেষ করতে পারবে, তার উপরেও পয়েন্ট পাবে। আর যদি পাখি বাঁচাতে পারো, মানে সবগুলো পাখিকে না ছুঁড়েই যদি সবগুলো শূকরকে মেরে ফেলতে পারো, তাহলে পাবে বোনাস পয়েন্ট। এই মোট পয়েন্টের ভিত্তিতে তুমি পাবে স্টার পয়েন্ট- এক স্টার, দুই স্টার বা তিন স্টার।

প্রথম লেভেলে অবশ্য তোমাকে শুধু লাল পাখিটিই দেয়া হবে। আস্তে আস্তে তুমি যতো নতুন লেভেল পার হবে, পাবে নতুন নতুন রঙের পাখি। এই পাখিগুলোর পার্থক্য কিন্তু শুধু রঙেই নয়; প্রতিটি পাখিরই রয়েছে বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা। যেমন নীল রঙের পাখিটির কথাই ধরো, দেখতে কী নিরীহ ছোট্ট একটা পাখি। সুযোগমত গেম স্ক্রিনে টাচ করলে পাখিটি হয়ে যায় তিনটি পাখি! তিনটি পাখি একসাথে হামলে পড়ে শূকরদের উপর। আবার ঝোপ বুঝে স্ক্রিনে টাচ করলে হলুদ পাখিটির গতি এমন বেড়ে যায়, একেবারে সবকিছু ভেঙেচুরে হামলে পড়ে। আর শাদা পাখিটিকে বলতে পারো বোমারু পাখি; উড়ে যাবার সময় ও নিচে বোমা ফেলতে পারে। আর কালোটি? সে তো নিজেই একটা ভয়ংকর বোমা! বিস্ফোরিত হয়ে শুকরদের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। ওদিকে শূকররাও কিন্তু কম যায় না। নতুন নতুন লেভেলে আসে স্বাস্থ্যবান আর মোটাসোটা-গাট্টাগোট্টা নতুন নতুন শূকর। কেউ কেউ আবার মাথায় হেলমেটও পড়ে আসে; ওদের মেরে তাড়াতে পাখিগুলোর একটু বেগই পেতে হয়। সব মিলিয়ে দারুণ রোমাঞ্চকর এক পরিস্থিতি।
এখন পর্যন্ত অ্যাংরি বার্ডস গেইমসের বেশ কয়েকটি ভার্সন বের হয়েছে। প্রথমবারের সেই ক্লাসিক ভার্সনের পর বের হয়েছে আরো তিনটি ভার্সন- অ্যাংরি বার্ডস সিজন্স, অ্যাংরি বার্ডস রিও আর সর্বশেষ অ্যাংরি বার্ডস স্পেস। মাঝে একটি স্পেশাল ভার্সনও বের হয়েছিল; নাম ছিল অ্যাংরি বার্ডস ম্যাজিক। শুধু তাই না, ভার্সনগুলোর নতুন নতুন আপডেটে তুমি পাবে নতুন লেভেল আর নতুন নতুন পরিবেশ।
অ্যাংরি বার্ডসের সব গল্পই তো শোনা হয়ে গেল। তবে আর দেরি করে কাজ কি? এখনি আবার নেমে পড়ো দুষ্টু শূকরদের কাছ থেকে পাখিদের হারানো ডিম উদ্ধারে।
সুত্রঃhttp://kidz.bdnews24.com/mainStory.php