৯ নভে, ২০১১

দ্যা মেসেজ : নির্মাণের ভেতর-বাহির (চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রবন্ধ - ইন্টারনেট থেকে নেয়া)

the-message.jpg
[দ্যা ম্যাসেজ। পরিচালক ও প্রযোজক : মোস্তাফা আক্কাদ। রচনা : এইচ এ এল ক্রেইগ। অন্যতম ভূমিকায় : এনথনি কুইন, ইরিন পাপাস, মাইকেল আনসারা, জনি সাক্কা, মাইকেল ফরেস্ট। মিউজিক : মরিস জুরি। চিত্রধারণ : সাইদ বাকের, জ্যাক হিলডাইর্ড, ইবরাহিম সালেম। সম্পাদনা : জন ব্লম, হুসাইন আফিফি। ড্রিসট্রিবিউশন : ফ্লিমকো ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাকশন। মুক্তিকাল : মার্চ ৯, ১৯৭৬। ব্যপ্তিকাল : ১৭৭ মিনিট। ভাষা : ইংরেজী ও আরবী। বাজেট : ১০,০০০,০০০ ডলার। ]

'মুহাম্মদ, মেসেনজার অব আল্লাহ' মুভিটি 'দা মেসেজ' নামে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে আমেরিকাতে মুক্তি পায়। ছবিটির পরিচালক মোস্তাফা আক্কাদ। ছবিটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটকে উপজ্জীব্য করে নির্মাণ করা হয়েছে। ছবিটি ইংরেজী ভাষার পাশাপাশি 'আল-রিসালাহ' নামে আরবী ভাষায়ও নির্মাণ করা হয়।

মূলত ইসলামের
প্রাথমিক যুগের ইতিহাসকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরে এর কাহিনীবিন্যাস ও নির্মাণশৈলী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কায় ইসলাম প্রচারের সূচনাকাল, তৎকালীন সমাজপতিদের বিরোধীতা, তার অনুসারীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার, মদীনায় হিজরত, বদর-ওহোদের যুদ্ধ, পুনরায় বিজয়ীর বেশে তাদের মক্কায় প্রত্যাবর্তন এইসব কাহিনীকে ঘিরে 'দা মেসেজ' ছবির পটভূমি।
মূল গল্পের পটভূমিকে ঠিক রেখে ছবিটি আবর্তিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা হামজাহ বিন আবু মুত্তালিব, পালিতপূত্র জায়িদ, মক্কার নেতা আবু সুফিয়ান এবং তার স্ত্রী ইসলামের চরমতম বিরোধীতাকারীনী হিন্দা বিনতে উতবাহকে কেন্দ্র করে।

নির্মাণ
পরিচালক মোস্তাফা আক্কাদ যখন ইসলামের মৌলিক কাহিনী নিয়ে একটি ছবি নির্মাণের জন্য হলিউডের কাছে প্রস্তাব রাখেন তখন তিনি প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হন। পরবর্তীতে তিনি এই ফিল্ম নির্মাণের জন্য আমেরিকার বাইরে অর্থ অনুসন্ধান করেন। এক পর্যায়ে অর্থাভাবে ছবিটি নির্মাণ যখন বন্ধ হবার উপক্রম ঠিক এই মুহূর্তে লিবিয়ান নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফী এগিয়ে আসেন। ছবিটি লিবিয়া এবং মরক্কোতে শ্যূট করা হয়। প্রায় সাড়ে চারমাস সময় অতিবাহিত করে; রাসুলুল্লাহ সা.-এর সমকালীন মক্কা ও মদীনা শহর, ডামি কাবাঘর ও বদর-ওহোদ পর্বত ইত্যাদি সেট নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিচালক মোস্তাফা আক্কাদ এই ছবিটির মাধ্যমে পশ্চিমা ও ইসলামী বিশ্বের যে দূরত্ব তার একটি সেতুবন্ধন রচনা করতে চেয়েছেন। ১৯৭৬ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন :

'আমি ছবিটি নির্মাণ করেছি কারণ, এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত একটি চিন্তা থেকে এসেছে। তাছাড়া এই নির্মাণের বস্তুনিষ্ঠতা আছে। এর আছে একটি প্রামাণ্য কাহিনী, আছে কৌতুহল এবং নাটকীয়তা। তাছাড়াও ইসলামের একজন অনুসারী হিসেবে পাশ্চাত্যসমাজের নিকট ইসলামের পরিচিতি তুলে ধরার একটি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে আমি এই নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছি। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী মুসলিমের জন্য আমি যে কি সারপ্রাইজ রাখছি তা অচিরেই তারা জানতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি জানি, আমি যে গল্পটি এই ছবির মাধ্যমে বলতে চেয়েছি, তা পাশ্চাত্যের সাথে ইসলামের দূরত্বকে কমিয়ে আনবে।'

আক্কাদ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ঠিক একই সময় 'দা মেসেজ' ছবিটি আরবী ভাষায়ও নির্মাণ করেন। যাতে আরব বিশ্বের বিখ্যাত অভিনেত্রী মুনা ওয়াসেফ হিন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি অনুভব করেন যে, হলিউডি মুভির ইংরেজী ভার্সন থেকে আরবী ডাবিং করলে তা আরববিশ্বের দর্শকচাহিদার খোরাক মিটাতে পারবে না। এই জন্য তিনি ইংরেজী এবং আরবী ভার্সনে ইংরেজ ও এরাবিয়ান আলাদা আলাদা অভিনেতা নির্বাচন করেন। বর্তমানে ইংরেজী ও আরবী উভয় ভার্সনেই 'দা মেসেজ' মুভিটি একটি ডিভিডিতে বিক্রি হচ্ছে।

এই ছবিটির রিভিউ করতে গিয়ে, নিউইয়র্ক টাইম রিপোর্ট করেছিল যে, অবশেষে নির্মাণ শেষে এই ছবিটি যখন আমেরিকায় প্রিমিয়ার শো দেখার জন্য সিডিউল দেওয়া হয়, তখন, অপর একটি মুসলিম ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এই ছবিটি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা এই বলে বিভ্রান্তি ছড়ায় যে, ওয়াশিংটনের ইহুদীবাদী সংগঠন বি'নাই ব্রিথ-এর অধীনে এনথনি কুইন এই ছবিতে মুহাম্মদ চরিত্রে অভিনয় করেছে। তাদের অব্যাহত হুমকীতে ছবিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পণ্ড হয়। কিছু সাংবাদিক এবং পুলিশ নিহতের মধ্য দিয়ে এই সংকট নিরসন হলেও আমেরিকান বক্স অফিস মনে করে যে, পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিতর্কের অজানা আশংকা থেকেই যায়।'

রাসুলুল্লাহ সা. কে চিত্রায়ন
ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সা. এর কোন চরিত্র এই ছবিতে চিত্রায়ন করা হয়নি এবং পর্দায় প্রদর্শিত হয়নি। সেই সাথে তার কন্ঠের কোন সংলাপও শোনানো হয়নি। এই একই নীতি তাঁর স্ত্রীগণ, তাঁর মেয়ে, তাঁর জামাতা এবং তাঁর খলীফাগণের ব্যাপারেও অনুসরণ করা হয়েছে। আবু বকর সিদ্দিক, উমর ইবনে খাত্তাব, ওসমান ইবনে আফফান, আলী ইবনে আবু তালিব এবং মুয়াবিয়াকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রাসুলুল্লাহ সা.-এর চাচা হামজাহ (এনথনি কুইন) এবং তাঁর পালিতপুত্র জায়িদ (ডেমিয়েন থমাস) এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। বদর ও ওহোদ যুদ্ধে হামজাকেই রাসুলুল্লাহ-এর নির্দেশক্রমে নের্তৃত্বদানরত অবস্থায় পর্দায় দেখানো হয়।

যখন রাসুলুল্লাহকে কোন দৃশ্যে খুবই নিকটবর্তী দেখানো হয়েছে তখন তার উপস্থিতি বুঝাতে মিষ্টি আলোকসজ্জা ও শ্রুতিমধুর অরগান মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে। তার কোন উক্তি কাউকে দিয়ে পুনরাবৃত্তি করে চিত্রায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে হাজমা, জায়িদ অথবা বিলাল অন্যতম। যখন কোন দৃশ্য তার চরিত্র ডিমান্ড করেছে তখন সেই দৃশ্যটিকে 'পয়েন্ট অব ভিউ' করে পর্দায় প্রদর্শন করা হয়েছে। আবার অনেক সময় তার সংলাপের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বদরের যুদ্ধে আলী রা-এর তলোয়ার 'জুলফিকার'কে পর্দায় দেখানো এবং মদীনায় প্রবেশের পর রাসুলুল্লাহ সা.-এর উট প্রদর্শনের উদাহরণ প্রয়োজ্য।

চরিত্রসমূহ
ইংরেজী ভার্সনে : এনথনি কুইন-হামজাহ, ইরিন পাপাস-হিন্দা, মাইকেল আনসারা-আবু সুফিয়ান, জনি সাক্কা-বিলাল, ডেমিয়েন থমাস-জায়িদ, মাইকেল ফরেস্ট-খালিদ, ডোনাল্ড বারটন-আম্মার, ইভেন সালন-ইয়সির, এনড্র মোরেল-আবু তালিব, উলফ মরিস-আবু লাহাব, রোসেলি ক্রটচেলি-সুমাইয়া।

আরবী ভার্সনে : আবদুল্লাহ গেইথ-হামজাহ, মুনা ওয়াসেফ-হিনদা, হমিদ গেইথ-আবু সুফিয়ান চরিত্রে, আলী আহমেদ সালেম-বিলাল, আহমেদ মারসি-জায়িদ, মুহাম্মদ আল-আরাবী- আম্মার, হাসান আল-জান্দি-আবু জেহেল, মাহমুদ সায়েদ-খালিদ।

এ্যাওয়ার্ড
ছবিটি ১৯৭৭ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে। বেস্ট মিউজিকের স্কোরে এটির সংগীত পরিচালক মরিস জুরি এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

মোস্তাফা আক্কাদ : 'দা মেসেজ' নির্মাতা
'দা মেসেজ' মুভিটির নির্মাতা মোস্তাফা আক্কাদ একজন সিরিয়ান-আমেরিকান ফিল্ম প্রযোজক এবং পরিচালক। তিনি সিরিজ মুভি 'হেলোইন', 'মোহাম্মদ, মেসেনজার অব আল্লাহ' এবং 'লায়ন অব ডেজার্ট' ছবি নির্মাতা হিসেবে বিখ্যাত। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, তাঁকে তাঁর মেয়ে রিমা আক্কাদ মোনলাসহ ২০০৫ সালে জর্ডানের আম্মানে এক আত্মঘাতি বোমা হামলা করে আল-কায়েদার একটি গ্রুপ নির্মমভাবে হত্যা করে।

আক্কাদ জুলাই ১, ১৯৩০ সালে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা হতেই তিনি একজন হলিউডের পরিচালক হবার মানসিকতা পোষণ করতেন। তিনি যখন তার এই মনের ইচ্ছাটি ব্যক্ত করেন তখন তাকে নিয়ে শহরে বেশ হাসা-হাসি ও কৌতুকের সৃষ্টি হয়। কারণ আক্কাদের পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত; আমেরিকার মতো জায়গায় গিয়ে আক্কাদের পড়াশুনা করার কোন সামর্থ ছিল না। কিন্তু একদিন আক্কাদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে যায়। কাকতালীয়ভাবে তাঁর সাথে একজন আমেরিকান প্রযোজকের পরিচয় ঘটে। তিনি আক্কাদের ইচ্ছার কথাটি জানতে পারেন এবং আক্কাদকে আমেরিকা নিয়ে যাবার সুযোগ করে দেন। বিমানবন্দরে আক্কাদের পিতা আক্কাদকে বিদায় জানানোর সময় এক পকেটে মাত্র দুইশত ডলার এবং অন্য পকেটে একটি কোরআন শরীফ দিয়ে বলেন, এই ছিল আমার কাছে সম্বল; যা তোমাকে আমি দিতে পারলাম।

অবশেষে আক্কাদ স্বপ্নের আমেরিকাতে আসেন এবং লস এঞ্জেলস-এ অবস্থিত ইভনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে ফিল্ম পরিচালনা ও প্রযোজনা বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। এখান থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পরিচালক স্যাম পাকেনপাহ-এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচালক পাকেনপাহ আক্কাদকে হলিউডে যোগদানের জন্য বলেন এবং আলজেরিয়ার অভ্যুত্থানের উপর একটি ছবি নির্মাণের কাজের ব্যাপারে বললে, আক্কাদ আমেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চ্যানেল সিবিএস-এ চাকুরীতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন বিখ্যাত ছবি: 'মোহম্মদ, মেসেনজার অব গড' (দা মেসেজ নামে যা ১৯৭৭ সালে আমেরিকাতে মুক্তিপ্রাপ্ত)। এতে তিনি এন্টনি কুইন এবং ইরিন পাপাসকে স্টিয়ারিং হিসেবে নেন। আক্কাদ হলিউডের তত্ত্বাবধায়নে ছবিটি মরক্কোতে নির্মাণ করেন।
১৯৭৮ সালে আক্কাদ আরেক বিখ্যাত সিরিজ হেলোইন ছবি নির্মাণ শুরু করেন। যা আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগায়।

১৯৮০ সালে মোস্তাফা আক্কাদ নির্মাণ করেন 'লায়ন অব ডেজার্ট'। এই ছবিতেও এন্টনি কুইন, ইরিন পাপাসরা অন্যতম ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটির কাহিনী লিবিয়ান বেদুইন নেতা ওমর মুকতারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তিনি ইতালিয়ান একনায়ক বেনিতো মুসিলিনির আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে লিবিয়ার মরুভূমিতে জিহাদ করেছিলেন। এই ছবিটি নির্মাণের জন্য লিবিয়ান নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফী ৩৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। ছবিটির ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামবিদ্বেষী মহল হতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। ফলে বক্স অফিসে তা ব্যবসা সফল হতে পারেনি।

মোস্তাফা আক্কাদের নির্মাণকাজের উল্লেখযোগ্য তালিকা হচ্ছে : মোহাম্মদ, মেসেনজার অব গড (১৯৭৭), হেলোইন (১৯৭৮), লায়ন অব দা ডেসার্ট (১৯৮০), হেলোইন-২ (১৯৮১), হেলোইন-৩ : সেশন অব দা ওয়াচ (১৯৮২), হেলোইন-৪ : দা রিটার্ন অব মাইকেল মুরস (১৯৮৮), হেলোইন-৫ : দা রিভেঞ্জ অব মাইকেল মুরস (১৯৮৯), হেলোইন : দা কারস অব মাইকেল মুরস (১৯৯৫), হেলোইন এইচ-২০ : ২০ ইয়ারস লেটার (১৯৯৮), হেলোইন : রিসারেকশন (২০০২)।

পরবর্তীতে মোস্তাফা আক্কাদ যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত 'পাইনউড স্টুডিও' ক্রয়ের চেষ্টা করেন। র‌্যাংক অর্গানাইজেশনের এই স্টুডিওটি সাউথ-ইস্ট লন্ডনের 'টুকেনহাম'-এ অবস্থিত।

মোস্তাফা আক্কাদ তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে ইসলামী ইতিহাসের বিজয়ী নায়ক গ্রেট সালাউদ্দীন আইয়ুবীকে নিয়ে, প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের একটি মুভি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এই ছবিতে সালাউদ্দীন আইয়ুবীর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি বিখ্যাত অভিনেতা শ্যান কনোরি-কে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি ক্রুসেডের কাহিনী নিয়ে নির্মানের জন্য এই ছবির স্ক্রিপ্টও প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিলো ছবিটির সেট তিনি নির্মাণ করবেন জর্ডানে। সেই জর্ডানেরই রাজধানী আম্মানের হোটেলে তাকে বোমা হামলা করার আগে একদিন তিনি এই ছবিটি সম্পর্কে বলেছিলেন :

...সালাউদ্দীন আইযূবীর মধ্যে মূলত আমরা ইসলামী জজবার উপস্থিতি দেখতে পাই। এটা ঠিক যে, মনে হয় ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম। কারণ অল্পসংখ্যক বিভ্রান্ত মুসলিম আজ সন্ত্রাসী, যা গোটা ধর্মটাকে প্রভাবিত করেছে। যদি সত্যিই ধর্মীয় সন্ত্রাস হয় তা ছিল ক্রুসেড। কিন্তু এটার জন্য তো তোমরা গোটা খ্রিস্টান ধর্মটাকে দায়ী করতে পারো না। এটাই হচ্ছে আমার মেসেজ...

মোস্তফা আক্কাদ তাঁর স্বপ্নের সালাউদ্দীন আউয়ুবীর উপর চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে যেতে পারেননি। কারণ নভেম্বর ১১, ২০০৫ সালে আম্মানের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে তিনি যখন তার ৩৪ বছরের কন্যা রিমাকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন তখন এক সিরিজ আত্মঘাতি বোমা হামলা চালানো হয়। আল কায়েদার এই বোমা হামলায় তার মেয়ে তাৎক্ষণিক মারা যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যকালে তার বয়স ছিল ৭৫ বছর। তিনি তারেক, মালেকসহ তিন সন্তান রেখে যান। যারা পরবর্তীতে তাঁর অবশিষ্ট হেলোইন মুভিটি নির্মাণে এগিয়ে এসেছে।

দা মেসেজ : অন্যতম চরিত্রের ভূমিকায় যারা
মোস্তাফা আক্কাদ নির্মিত দা মেসেজ মুভির বিভিন্ন চরিত্রে যারা অভিনয় করেন তাঁদের বর্নাঢ্য করিয়র পেশ চমকপ্রদ। তাদের কেউ কেউ এখন বেঁচে নেই। এই মুভিটির ইংরেজী ভার্সনের প্রধান স্টিয়ারিং যারা ছিলেন তাদের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো :

* 'দা মেসেজ' মুভিটির হামজা চরিত্রে অভিনয় করেন মেক্সিকান-আমেরিকান অভিনেতা এনথনি কুইন (এপ্রিল ২১, ১৯১৫-জুন ৩, ২০০১)। তিনি একজন লেখক এবং চিত্রশিল্পীও বটে। তার অভিনিত বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : জোরবা দা গ্রিক, লরেন্স অব আরাবিয়া, দা গানস অব নাভারন, দা মেসেজ, ফ্রেডরোকো ফেলেনি'র লা স্ট্রেড। এনথনি কুইন দুইবার একাডেমি এ্যাওয়ার্ড পান। তিনি আমেরিকার বোস্টন শহরে মৃত্যুবরণ করেন।

* হিন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন ইরিন পাপাস (জন্ম সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯২৬)। ইনি একজন গ্রীক অভিনেত্রী এবং সঙ্গীত শিল্পী। তিনি তাঁর পঞ্চাশ বছর ক্যারিয়রে ৭০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।

* আবু সুফিয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিরিয়ান বংশদ্ভুত অভিনেতা মাইকেল আনসারা (এপ্রিল ১৫, ১৯২২)। তিনি আমেরিকার টিভি সিরিজ ব্রোকেন এরোসহ কয়েকটি সিরিজ প্রোগ্রামে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হন।

* বিলাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেতা জনি সাক্কা (জুলাই ২১, ১৯৩৪- সেপ্টেম্বর ১৪, ২০০৬)। তিনি সেনেগালের ডাকার শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম ছিল লামাইন সাক্কা। তার পিতা ছিলেন গাম্বিয়ান। তিনি অভিনয় জগতে বর্নাঢ্য ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি দা মেসেজ মুভিতে অভিনয় করেন। ৭২ বছর বয়সে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

* জায়িদ চরিত্রে অভিনয়কারী ডোমেইন থমাস ১১ এপ্রিল ১৯৪২ সালে মিশরের ইসমাইলিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ব্রিটিশ ফিল্ম এবং টিভি অভিনেতা। দা মেসেজ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ১৯৮৩ সালে প্রচারিত বিসিসি প্রোডাকশনের সিরিজে রিচার্ড মেশনের ভূমিকায় অভিনয়।

* খালিদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল ফরেস্ট। তার জন্ম এপ্রিল ১৭, ১৯২৯, ডাকোটায়। ইনি একজন আমেরিকান অভিনেতা ও এনিমেশন শিল্পী।

* আম্মার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডোনাল্ড বার্টন। তাঁর জন্ম ফেব্রুয়ারী ১০, ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের পূর্ব এনজেলিয়ার নরওয়াচ শহরে। তিনি অভিনেত্রী ক্যারল বাকেরের স্বামী। ১৯৭৭ সালে তিনি দা মেসেজ চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ডিসেম্বর ৮, ২০০৭ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাথড্রেল সিটিতে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।

* ইয়াসির চরিত্রে অভিনয় কারী আয়েন সেলন নিউজিল্যান্ড বংশদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা। তার জন্ম সেপ্টেম্বর ০৭, ১৯১৭ সালে। তিনি কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যে। ১৯৭৬ সালে তিনি দা মেসেজ মুভিতে অভিনয়ের অফার পান। ৬৭ বছর বয়সে আয়েন সেলন জুলাই ৭, ১৯৮৫ সালে মারা যান।

* এনড্রু মোরেল যিনি একজন ব্রিটিশ অভিনেতা, তিনি দা মেসেজ মুভিতে রাসুলুল্লাহর চাচা আবু তালিব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর জন্ম ২০ আগস্ট ১৯০৯ সালে লন্ডনে এবং মৃত্যু ৬৭ বছর বয়সে ২৮ নভেম্বর ১৯৭৮ সালে।

'দা মেসেজ' মুভির আরবী ভার্সনে মিশরের বিখ্যাত অভিনেতা আবদুল্লাহ গেইথ (১৯৩০-১২ মার্চ ১৯৯৩) হামজা চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও এই মুভিতে সিরিয়ান মঞ্চ, চলচ্চিত্র এবং টিভি অভিনেত্রী মুনা ওয়াসেফ (জন্ম ফেব্রুয়ারি ৯, ১৯৪২) হিন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন।

বাংলা ডাবিংকৃত 'দা মেসেজ'
বাংলাভাষী দর্শকদের চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি 'দা মেসেজ' মুভিটির পূর্ণাঙ্গ বাংলা ডাবিং করা হয়েছে। এর অনুবাদ করেছেন আহসান হাবীব খান। এতে হামজা চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, রেডিও-টিভি ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মানছুর। এছাড়াও আরও কণ্ঠ দিয়েছেন শরীফ বায়জীদ মাহমুদ, মোস্তাগিছুর রহমান মোস্তাক, হসিনুর রব মানু, আবদুল গণি বিদ্বান প্রমুখ। গত ২৮ মার্চ ২০১০ এক জনাকীর্ণ সিরাত উদযাপন সন্ধায় বাংলা ডাবিংকৃত মুভিটির একটি প্রিমিয়ার শো জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা ডাবিং পরিচালনা করেছে ডাইরেক্টর গিল্ডস এবং ছবিটি প্যান-ইসলামিক কালচারাল হেরিটেজ-এর ব্যানারে বাজারে পরিবেশন করেছে সিএইচপি।

[সূত্রঃ ইন্টারনেট]
http://www.sonarbangladesh.com/articles/NajmusSaadat

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

bdnews24.com - Home

ইরান বাংলা নিউজ

বিবিসি বাংলা

দৈনিক সংগ্রাম