১৫ নভে, ২০১১

আমরা যারা আশির দশকে জন্মেছিলাম!

মনে পড়ে যায়… আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।
মনে পড়ে যায়… শুক্রবারের থান্ডারক্যাটস বা জেটসন্স এর কথা। সঙ্গে ছিলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, কেয়ার বেয়ার আর টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টেলস। আরো ছিল ভল্ট্রন আর গোবট।
মনে পড়ে যায়… রবিবার আর বুধবার রাত থাকতো ইংলিশ সিরিয়ালের জন্য বরাদ্দ। ম্যাকগাইভার, মায়ামি ভাইস, এয়ারউলফ, নাইট রাইডার, স্টারট্রেক, দ্যা ফলগাই, দ্যা এটিম, হাওয়াই ফাইভ ও… কতকিছু।
মনে পড়ে যায়… বহুব্রীহি, সংশপ্তক আর এইসব দিনরাত্রির কথা। তখন কেউ সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকতোনা, কারন শুক্রবার ছাড়া বিটিভি প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলতো। ছিলনা অন্য কোন চ্যানেল দেখার সুযোগ।
মনে পড়ে যায়… ঈদ আনন্দমেলা, যদি কিছু মনে না করেন আর ইত্যাদির কথা।
মনে পড়ে যায়… প্রতি বুধবারে রাত নটায় ম্যাকগাইভার দেখার জন্য নৃত্যের তালে তালে অনুষ্ঠানটা জোর করে দেখার কথা।
মনে পড়ে যায়… শুক্রুবারের মুভি অফ দ্যা উইক আর মনের মুকুরে নাটক। রাতে ছিল বিল কসবি শো , আরো পরে এলো পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জারস।
মনে পড়ে যায়… টার্মিনেটর টু দেখে রাতে ঘুমাতে না পারার কথা।
মনে পড়ে যায়… তখন খেলার সরঞ্জাম বলতে ছিল লাটিম, মার্বেল আর কোকাকোলার কল্যাণে ইয়ো ইয়ো। প্লাস্টিকের পিস্তল কারো হাফপ্যান্টের বেল্টের হুক থেকে ঝুলতে দেখলে সবাই এসে ভাব জমাতো শুধুমাত্র পিস্তলটা একবার হাতে নেবার জন্য।
মনে পড়ে যায়… হ্যালির ধুমকেতু, আটাশি’র বন্যা আর ম্যারাডোনার একহাতে গোল দেবার কথা।
মনে পড়ে যায়… কাউকে শালা বলে গালি দিতেও তখন মুখে আটকাতো।
মনে পড়ে যায়… দোকান থেকে কার্টুনের স্টিকার কেনার কথা। বাবলগাম খাওয়া হত ডাইনোসোরাসের ট্যাটুর জন্য।
মনে পড়ে যায়… ভিসিপি আর ভিসিয়ারের কথা। সবার মুখে মখে তখন ছিল “হাওয়া হাওয়া” গানটা।
মনে পড়ে যায়… ব্রিক গেমের কথা। তখন ছিলো না কম্পিউটারের জোয়ার।
মনে পড়ে যায়… বড়লোক বন্ধুদের কথা, যাদের কে তাদের বাবা-মা রা টিফিনের জন্য প্রতিদিন দুই টাকা করে দিত।
মনে পড়ে যায়… শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা আর যাদুঘরের কথা, সপ্তাহশেষে ঘোরাঘুরির একমাত্র যায়গা ছিলো ঐগুলো।
মনে পড়ে যায়… ট্রাকের মত চেহারার কাঠের সিটওয়ালা মুড়ির টিন বাস গুলোকে। তখন কোন এসি বাস ছিলোনা।
মনে পড়ে যায়… চাচা চৌধুরি, বিল্লু, পিঙ্কী, টিনটিন আর আর্চির কথা। পাওয়া যেত থান্ডারক্যাটস, স্পাইডারম্যান আর সুপারম্যানের কমিক্সও।
মনে পড়ে যায়… গোয়েন্দা রাজু আর তিন গোয়েন্দার কথা।
মনে পড়ে যায়… ফীডব্যাক, সোলস, মাইলস, মাইকেল জ্যাক্সন, আবা আর মর্ডাণ টকিঙ্গের কথা। প্রিয় গান ছিল “চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে…” তখনো জানতামনা গানটা কে গেয়েছে!
মনে পড়ে যায়… অঙ্ক ক্লাসে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠা বানরটার কথা, যে আমাদের জীবনকে অতীষ্ট করে রাখতো।
মনে পড়ে যায়… স্কুলে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলার কথা।
মনে পড়ে যায়… বরফ-পানি, লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, কুমির-তোর-জলে-নেমেছি, চোর-পুলিশ আর সাত চারার কথা।
মনে পড়ে যায়… টীচার হেড ডাউন করে রাখতে বললে হেডডাউন করে কোলের উপর কমিক্স বই পড়ার কথা।
মনে পড়ে যায়… কোক আর পেপসি খেয়ে কে কত ঢেকুর তুলতে পারে সেই প্রতিযোগীতার কথা।
মনে পড়ে যায়… স্কুলে যাবার সময় গলার কাছে মালার মত করে ফ্লাক্সটা ঝুলতো।
মনে পড়ে যায়… রিংচিপ্স আর সিভিটের কথা। মিমি আর বেবি লজেন্সও বাদ ছিলোনা।
মনে পড়ে যায়… পোলার আর বেবি আইস্ক্রিমের কথা। চকোবারের নাম তখনো কানে আসেনি।
মনে পড়ে যায়… একজনের কাছে পেজার দেখে অবাক হয়েছিলাম খুব!
মনে পড়ে যায়… ঘুড়ি উড়ানোর দিনগুলোকে। সুতায় মাঞ্জা দিতে গিয়ে হাত কেটেছি কতবার!
মনে পড়ে যায়… ভিউকার্ড, পোস্টার, স্ট্যাম্প আর কয়েন জমানোর কথা। এগুলো পাবার জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম!
মনে পড়ে যায়… কলম ফাইটের কথা। স্কুলের টিফিনের অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো স্পেশাল কলম দিয়ে কলম ফাইট খেলা।
মনে পড়ে যায়… স্কুলের সেই দেমাগী ক্যাপ্টেনের কথা, যার হাতে ছিলো প্রেসিডেন্টের সমান ক্ষমতা। ক্লাসে কথা বললেই নাম উঠে যেত ব্লাকবোর্ডে। অনেক সময় নাম উঠতে কথা বলার দরকার হতনা, ক্যাপ্টেনের সাথে ঝগড়াঝাঁটিই এর জন্য যথেষ্ট ছিলো।
মনে পড়ে যায়… প্রায় ফাঁকা একটা শহরে বেড়ে উঠার কথা। যা এখন লোকে লোকারন্য।
মনে পড়ে যায় আশির দশকের সেইসব সোনালী দিনগুলোর কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

bdnews24.com - Home

ইরান বাংলা নিউজ

বিবিসি বাংলা

দৈনিক সংগ্রাম