১৪ নভে, ২০১১

দুই গ্রেট লিডার বংগবন্ধু ও গাদ্দাফীর জীবনের মিল অমিল

১। দুইজনই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মহান নেতা।
২। দুই জনই কট্টর দেশপ্রেমিক, আত্মমর্যাদায় দাম্ভিক। একজন বলেছেন, আমি ইমামদের ইমাম, আফ্রিকার রাজাদের রাজা।
আরেকজনকে ওলামা লীগ উপাধি দিয়েছে, "খলীফাতুল মুসলেমিন"- তাঁর আদর্শ না মানলে কুফরী করা হবে।
৩। দু'জনের পড়াশোনাও একই রকমের। বেনগাজী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাদ্দাফী ভর্তি হয়েছিলেন, বংগবন্ধুও ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপরে আর শেষ করা হয়নি।
৪। দুই জনই জাতির পিতা। জাতির কাছে থেকে সম্পদ নিয়ে নিজ বাসভবনে রাখতেন। এক নেতার মৃত্যুর পর বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছিল কাড়ি কাড়ি সম্পদ। অথচ সে সময় চলছিল দেশে দূর্ভিক্ষ।
আরেক জাতির পিতা সরকারী সফরে ইতালী যেতেও প্লেনে করে উট নিয়ে যেতেন। কৃত্রিম মরুভূমিতে থাকতেন তাঁবু টানিয়ে। সাথে বিদেশী মহিলা সিকিউরিটি।
৫। দুই জনের সন্তানেরাই ছিল তাঁদের ভরসা। দুই জনের ছেলে-মেয়েরাই ছিল শয়তানের প্রত্যক্ষ সাগরেদ, মাতাল।
একজনের সন্তানদের কাজ ছিল সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের দিকে নজর দেয়া, ব্যাংক ডাকাতি করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন করা, রক্ষী-বাহিনীর প্রধান ছিল একজন।
আরেকজনের হাফ ডজনেরও বেশী সন্তানগুলো ছিল সরকারের সব বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তা। যা খুশী তাই করত। সাইফ আল ইসলাম মারিয়া কেরীর এক গানের জন্য এক মিলিয়ন ডলার উপহার দিয়েছিল। বাপের দেশ যে! জাতির পিতার উপযুক্ত সন্তান।


১৯৭৩ সালে ওয়াইসি সম্মেলনে সব জাতির পিতা - আরাফাত, বংগবন্ধু, ভুট্টো, গাদ্দাফী।


৬। দু'নেতাই প্রাণ খুলে হাসতে পারতেন।



৬। দুই জাতির পিতারই মৃত্যু হয়েছে খুব করুণ, বেদনাদায়ক অবস্থায়। নির্মম হলেও সত্য স্ব স্ব দেশের মানুষের হাতে। আবার নিজ দলের লোকদের দ্বারাই। যে দেশের জন্য তাঁরা জীবন-প্রাণ সঁপে দিয়েছিলের তাদের মৃত্যুর পর সেই দেশের একজন মানুষকেও কাঁদতে দেখা যায়নি।
এক বীর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নিজ বাসভবনের সিঁড়িতে, তারপর গড়িয়ে পরেছেন নীচে। শেষ কথা ছিল 'তোরা আমার কাছে কি চাস, আমি তাই দিব'। মৃত্যুর পর তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যরাই সরকার গঠন করে। তাঁরই হাতে গড়া নেতা তারই পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক হয় তার মৃত্যুর পর সরকার প্রধান। আওয়ামী আরেক নেতা রাশিয়ায় গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এক ফিরআউনের হাত থেকে নাজাত পেয়েছে।

আরেক বীর 'মরু ঈগল' মারা গেছেন, তারই বানানো গর্তে, সুয়িজ খালে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওখানে পড়েছিলেন। শেষ কথা ছিল, ' ও আমার সন্তানেরা, আমাকে জানে মারিস না'। তাঁর মন্ত্রীসভার প্রাক্তন সদস্য, তাঁরই হাতে গড়া সৈন্যরা এনটিসির নেতা ও সম্মুখ সমরে এই বীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়।


অথচ কি না হত এই জাতির পিতার অংগুলি হেলনে! এই কয়েক মাস আগেই এক সৈন্য, যে কিনা বিদ্রোহীদের দিকে গুলি করতে অস্বীকার করেছিল, আগুনে নিক্ষেপ করে জীবন্ত হত্যা করেছে গাদ্দাফী স্বয়ং স্পটে উপস্থিত থেকে।
ইউ টিউবে ভিডিও দেখুনঃ সাবধান টু মাচ গ্রাফিক

৭। এক বীরের লাশ গোসল করাতে প্রথমে কেউ রাজী হয়নি। পরে এক গ্রাম্য ইমামকে ধমক দিয়ে রাজী করিয়েছিল জাতির পিতার হত্যাকারীরা । ৫৫৫ সাবান দিয়ে গোসল সেরে দ্রুর জানাযা সম্পাদন করা হয়। কবর দেয়া হয় অচেনা, অখ্যাত জায়গায়, তাঁর নিজ গ্রাম টুংগীপাড়ায়। অথচ এই বীরও কি না করেছেন! লাল ঘোড়া দাবড়ানো, কোথায় সিরাজ সিকদার ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কর্মসমূহের অংশ।
আরেক বীরের লাশ মাছের আড়ত বাজারে হিমাগারে পড়ে থাকে কয়েকদিন। বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করাতে যে তিনি সত্যিই আর ইহজগতে নেই। দাফনও করানো হয় খুবই সাধারণ অবস্থায়। ইমাম বানানো হয় তার এক মন্ত্রীর ভাইপোকে। লাশ ফেলে দেয়া সাহারা মরুভূমির অজ্ঞাত স্থানে।

৮। দুই নেতাই নিজের প্রতিকৃতি, মূর্তি বানাতে পছন্দ করতেন।


৯। কড়া ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ছিলেন দুই নেতাই। প্রমাণ দেখিয়েছেন কাজে কর্মে। বিশেষ করে ইসলামের উপর ছিল যত আক্রোশ! বুঝিনা ইসলাম এদের উপর কি অকাজটাই না করেছিল?!
গাদ্দাফী কোর'আন শরীফে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। এক ইমাম প্রতিবাদ করার সাথে সাথে হত্যা করা হয়। ঈদ হত তারই নির্দেশে। একবার লিবিয়ায় ঈদ হয় ২৮ রোজার পর। তারপর আবার ঘোষণা করেন পরের দিনও ঈদ।
আরেক নেতা রেডিও- টিভি থেকে বিসমিল্লাহ, আযান, আল্লাহ হাফেয বলা বন্ধ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে 'ইক্বরা' শব্দ উঠান, জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'মুসলিম', সলিমুল্লাহ হলের নাম থেকে 'মুসলিম' সলিমুল্লাহ এতিমখানা থেকে 'মুসলিম', এমনকি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে 'ইসলাম' নাম সরান!
১০। একজন দেশের উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। গরীব রাষ্ট্রকে ঋণমুক্ত দেশে পরিণত করেন। আরেকজন বানান চোরের খনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই দূর্ভিক্ষ আসার কথা ছিল, আসেনি কারন বাংলার মানুষ কাজ করেছিল প্রচুর। কিন্তু দূর্ভিক্ষ আসে '৭৪ এ, বাকশাল আসার পর।
১১। দুই নেতাই বিরোধী দল সহ্য করতে পারতেন না। একদলীয় স্বৈরশাসক ছিলেন। অথচ দুইজনই বলতেন তাঁদের দেশের গণতন্ত্র বিদ্যমান।
১২। মৃত্যুর পর দুই নেতার মেয়েই বিদেশে ছিলেন। কিন্তু শোকপ্রকাশের অভিব্যক্তি ভিন্ন। একজন হাঊমাঊ করে কাঁদেন, আরেকজন টিভির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বাপের প্রায়শ্চিত্ত দেখছেন।




সাইফ আল ইসলাম আর তার বোন


১৩। দুই জাতির পিতাই নিহত হয় আমেরিকার নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে।
১৪। দুইজনই আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক নেতা ছিলেন। একজন ছিলেন খাঁটি আরব, আরেকজন ছিলেন খাঁটি বাঙালী, হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী। অন্যজাতির মানুষদের উপর বেশী বিশ্বাস করতেন, নিজ দেশের লোকদের ভিন জাতিকেই বেশী প্রাধান্য দিতেন।
গাদ্দাফীর আশ-পাশে সারাক্ষণ থাকত আফ্রিকান মাস্তানেরা, তাঁর সন্তানদের শিক্ষকও ছিল অমুসলিম, অথবা ইসলাম বিদ্বেষীরা।
আর বংগবন্ধুর বাড়ীতেও পরিচারিকা, কাজের বুয়া হিন্দু। গৃহশিক্ষকও ছিল এক হিন্দু মহিলা-হাসিনা, রেহানা, রাসেলকে পড়াত। হাসিনাও বাবার মত বাসায় কাজের বুয়া থেকে শুরু করে দেখভাল করার জন্য সবাইকে হিন্দু রেখেছেন। তিনি এবার ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০ জেলার ডিসি-এসপিকে নিয়োগ দিয়েছেন হিন্দুদেরকে। এমন না যে এসব নিয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতে বরং রীতিমত তুঘলকী কান্ড ঘটিয়ে, সিনিয়রদের ডিঙিয়ে এসব নিয়োগ। হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত একজন খাটি বাঙালী দূত -নিম চন্দ্র ভৌমিক তো ভিন দেশে গিয়ে রীতিমত ভারতের পতাকা গাড়ীতে করে ঊড়িয়ে বেড়ায়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা অক্ষূন্ন রাখছে।
১৫। দুইনেতাই ভীষণ রাগী, গোঁয়াড় ছিলেন। চুরুট ফুকতেন। জন্ম খুব সাধারণ পরিবারে, গরীবানা হালতে। এইজন্য গরীবদের অভাব বেশী বুঝতেন।
তাদের বন্ধুরা বলত, বড়দের প্রতি সম্মান দেখানো দুইনেতার স্কুল জীবনে ছিল না। ছোট বেলায় ডান-পিটে স্বভাবের অসম্ভব রকমের বখাটে ছিলেন দুই জাতির পিতাই।

মুসলিম বিশ্বের এসব জাতির পিতাদের হাত থেকে আল্লাহ রক্ষা করুন।
এঁরা এমন জাতির পিতা যে পাত্থরের মত চেপে বসে আছে সারা বিশ্বের প্রায় ১ বিলিয়ন মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর! এঁরা এমন জনপ্রিয় যে, একটা করে করে উইকেট পড়লে জনগণ নফল নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, উৎফুল্লিত হয়! হায়রে শাসক! জালিমের দল, শয়তানের চেলাদের হাত থেকে আল্লাহ কবে উদ্ধার করবে?


মূল লিঙ্কঃ http://sonarbangladesh.com/blog/nayankhan/72782

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

bdnews24.com - Home

ইরান বাংলা নিউজ

বিবিসি বাংলা

দৈনিক সংগ্রাম