
মনমাঝি
(১ম পর্ব)
One Moment in Annihilation’s Waste,
One Moment, of the Well of Life to taste –
The Stars are setting, and the Caravan
Draws to the Dawn of Nothing – Oh make haste !
– Omar Khayyam*
(১)

বাহারিয়ানামে পশ্চিম মরুভূমির এক মরুদ্যান থেকে বেরিয়ে প্রায় সারাদিন মরুভুমির বুক চিরে ড্রাইভ শেষে নিরুদ্দেশের মাঝখানে কোন এক ‘উদ্দেশে’ এসে পৌঁছেছি মনে হয়। রাতের মত তাঁবু ফেললাম এমন এক জায়গায় যাকে বলা যেতে পারে – প্রাকৃতিক ভাষ্কর্যের এক অপ্রাকৃতিক প্রদর্শণীশালা (এখানে দেখুন)। এখানকার অপার্থিব নির্জনতার – নির্জনতা আর অপার্থিবতা দুটোই যেন আরো তীব্র করে তুলেছে বালি ফুড়ে বেরুনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৫-২০ ফুট উঁচু অদ্ভুত কিছু চুনাপাথরের মূর্তি। মানুষের বানানো কিছু নয়, অথচ দেখতে গায়ে কাঁটা দেয়ার মত নানা রকম জীবন্ত প্রাণী আর ঘটনার ভাস্কর্যের মত! এখানে আছে মুর্গি ও ডিম, আছে ঘোড়ামুখো, আছে আইসক্রিম, আছেপারমানবিক মাশরুম মেঘ – যাকে আমাদের একজন নাম দিয়েছে ‘হিরোশিমা’, আছে এমন আরো অনেককিছু। এ যেন বিশাল জায়গা জুড়ে কোন এক ভিনগ্রহের ভৌতিক পরিত্যাক্ত ওপেন-এয়ার গ্যালারি।
হিরোশিমা



আইসক্রিম

মাশরুম
জায়গাটা কায়রো থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে, আর বাহারিয়া থেকে বোধহয় ১৫০-২০০ কিলো – মিশরের ‘পশ্চিম মরুভূমিতে’ (‘লিবীয় মরুভূমি’ নামেও পরিচিত) । ‘পশ্চিম মরুভূমি’ বৃহত্তর
সাহারা মরুভূমির ইজিপশীয় একটা অংশমাত্র – ঐটুকুই আয়তনে ৭ লক্ষ
বর্গকিলোমিটার। তো, বেশির ভাগ পথই মরুপথ ধরেই এসেছি, যার শুরু বাহারিয়ারও
আরো ২০০ কিলোমিটার পেছনে আল-ফাইয়ুম থেকে।
এই ঘটনার পর বছর পেরিয়ে গেছে, স্মৃতির পাতাতেও ধুলো জমেছে কিছুটা। ফলে এর পরের কাহিনি ঐ ধুলো জমা টুকরো স্মৃতি থেকেই লেখা। চোখে দেখার বিবরনের থেকে মনের দেখার অভিব্যক্তিই এখানে প্রাধান্য পাবে।

আমাদের এই মরুযাত্রার ইংরেজি নাম ‘ডেজার্ট সাফারি’। এই সেই ডেজার্ট বা ‘মরুভূমি’, যার সম্পর্কে এত পড়েছি – কত ‘ওয়েস্টার্ন’, কত আরব্য-পারস্য উপন্যাস, কত উপকথা-রূপকথা-ইতিকথা, কতকিছু – কিন্তু জীবনে এই প্রথম নিজের চোখে দেখছি। চোখে-মুখে-চুলে-ত্বকে সর্বাঙ্গে অনুভব করছি। কেমন যেন লাগছে। জীবনের রঙ অন্য রকম লাগছে! তার উপর এসেছি এক শ্বাসরূদ্ধকর জনঘনজলবৃষ্টিবন্যাশাসিত, সবুজ পিচ্চি একটা দেশ থেকে – যেখানে এখন আর তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মরুভূমির এই উষর-ধূসর-অপার শুন্যতা আমার অস্তিত্বের ভিত নাড়িয়ে দিল। মরুরাজ্য আমার মত এক নবাগতকে এমন অভ্যর্থনা জানাবে তা আগে ভাবতেই পারিনি।
উটের পিঠে নয়, আমাদের যাত্রাটা ছিল একটা আধুনিক ফোর-হুইল-ড্রাইভেই। কিন্তু ঝাঁকি খেতে খেতে গাড়িসুদ্ধ প্লেনের মত প্রায় শুন্যে উড়াল দেয়া, ঝড়ের সাগরে খোলামকুচির মত হেলে পড়া – নাচতে থাকা, বিশাল বালিয়াড়ির মাথায় ওঠার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে বুনো বাইসনের মতো তেড়ে যাওয়া, আবার সেখান থেকে বা অন্য কোন উচ্চতা থেকে মরুভূমির যৌনাবেদনময় অচিন পিচ্ছিল বক্রতা ঘেষে দুর্দমনীয় গতিতে ঝাপ দেয়া –


– আর এইসব কিছুর সাথে সাথে পাকস্থলিতে খালি-খালি ভাব, পেটের পেশীতে সঙ্কোচন আর সারাদেহে এ্যাড্রেনালিনের টাইফুন – এক কথায় অপুর্ব। রোমহর্ষক। কিন্তু সভ্যতার সাথে সব সম্পর্ক চ্ছিন্ন করে এই শত-সহস্র মাইলব্যাপী উষর -অপার শুন্যতার প্রায় অনন্ত বিস্তৃতির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া, এক অচেতন-অনন্ত-অদম্য নাস্তির বুক চিরে এক সচেতন অস্তির অবিরাম নিঃসঙ্গ সংগ্রাম – দুর্বোধ্যভাবে শিরশিরিয়ে উঠে কল্পনার স্নায়ুতন্ত্রে, নাড়া দিয়ে যায় আমার মত ‘গিজগিজ’ জগতের প্রাণীর অস্তিত্বের মর্মমূলে।


এয়ারপোর্ট, ট্রানজিট, মেঘ-নদী-সাগর-পর্বত, কায়রোর হিমবাহের মত ধেয়ে আসা ট্রাফিক আর তার ঐতিহাসিক স্থানগুলি, গাজী সালাউদ্দিনের দুর্গ, মুকাদ্দিম; শহরের মধ্যে নীলনদের ওপর প্রেমিকদের সেতু ‘কুবরি গামা’য় বহু রাত পর্যন্ত সুন্দরী ললনাদের স্রোত বা তার


মন্দির আর বাইরে সেই গা খুদে তৈরি দৈত্যাকৃতি মূর্তির সারির রূপধারন করে অহমের অভ্রভেদী মিনার; কর্নক মন্দিরের রাজসিকতা বা লু্কজরের বাদশাহি উপত্যকার মাটির নিচে ফুসতে থাকা অমরত্ব ও চিরস্থায়ীত্বের প্রাচীন গোপন বাসনা – এ সব কিছুই অন্ধকার মহাশুন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের আলেয়ার ফুটকির মতো আমার পাশ ঘেষে ছুটে গেছে। আমি তাদের বিয়ারিং পাইনি এই এতদিন পর্যন্ত।


(২)
For some we loved, the lovliest and the best
That from his Vintage rolling Time has prest,
Have drunk their Cup a Round or two before,
And one by one crept silently to rest.
কি যেন বলছিলাম? ও হ্যাঁ, পশ্চিম মরুভূমির বুক চিরে ছুটে চলেছি। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে বালু আর শুন্যতার সাগরের দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। সেই অসীম আদিম শুন্যতা – যার ভেতর দিয়ে নিশ্চয়ই অনেক ইতিহাস, অনেক সভ্যতা, অনেক দিগ্বিজয়ী বীর ও তাদের সৈন্যবাহিনী রথ হাঁকিয়ে গেছে যুগে যুগে তাকে জয়ের বাসনায়। কিন্তু না, সেই শুন্যতা – সেই শুন্যতাই রয়ে গেছে। বেমালুম হজম করে ফেলেছে সবাইকে। সবকিছুকে। নিঃশেষে। সেই সর্বব্যাপী শুন্যতার প্রায় স্পর্শগ্রাহ্য অমোঘতা, অনিবার্যতা, ঠিক জানালার বাইরেই যেন ভয়ঙ্কর নিরবতায় হাসতে হাসতে আমাদের সাথে সাথে ছুটে চলেছে। দেখতে দেখতে নিজেকে ভীষন ক্ষুদ্র আর অপ্রাসঙ্গিক মনে হল, আবার আশ্চর্যজনকভাবে এক অদ্ভুত শান্তি আর মেনে নেওয়ার মনোভাবে ছেয়ে গেল মন একই সাথে। ল্যান্ডক্রুজারের ক্ষুদ্র, উষ্ণ, নিরাপদ গর্ভে বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল আমরা যেন শুন্যতা থেকে, শুন্যতার মধ্য দিয়ে, শুন্যতার পানেই ছুটে চলেছি অবিরাম – মধ্যখানে অর্থময়তা আর অস্তিত্বের ক্ষনিকের উষ্ণ বুদ্বুদ তৈরি করার সংগ্রাম করতে করতে। এ যেন বৃহত্তর পরিসরে মানুষের অভিযাত্রারই এক সংক্ষিপ্তসার। তবে আগে হোক – পরে হোক, বুদ্বুদ্গুলি শেষমেশ ফেটেই যায়।উষর মরুভূমিতে শুন্যতার অপার বিস্তৃতির বুক চিরে ছুটতে ছুটতে সব অঙ্কই যেন আস্তে আস্তে মিলতে শুরু করলো – যতই আমি শুন্যতার এই মহাপরিকল্পনায় – অস্তিনাস্তির এই এ্যাবসার্ড দ্বৈরথে - নিজের অনিবার্য ভূমিকার সাথে শান্তিস্থাপন করতে থাকলাম।
…………………………………….

(২য় পর্ব)
Come, fill the Cup, and in the fire of Spring
Your Winter-garment of Repentance fling:
The Bird of Time has but a little way
To flutter—and the Bird is on the Wing.
(৩)
মিশরের মরুভূমি ঈশ্বররূপী-রাজাদের পর্বতসম
মূর্তি…মন্দির…আর…পিরামিডের রূপ ধারন করা অহমের অভ্রভেদী বিজ্ঞাপনে আকীর্ণ
হতে পারে – কিন্তু আমার কাছে মনে হতে লাগলো, চতুর্দিক থেকে নিত্য-প্রসারমান
অপরাজেয় করাল শুন্যতার মুখে এই বিজ্ঞাপন তাদের স্রষ্টাদের নিজেদের
অনিবার্য অসহায়ত্ব ও তুচ্ছতার-অনুভূতির বিরূদ্ধেই একরকম নিস্ফল করুন
বিদ্রোহ ও আস্ফালনমাত্র। হয়তো, শুন্যতার মহাফাঁদে আটকা পড়া চেতনার
স্থায়িত্ব, প্রাসঙ্গিকতা আর অর্থময়তার আকাঙ্খায় আর্তচিৎকার। ফান্দে পড়িয়া
বগা কান্দে রে! হয়তোবা অনিত্যতার সমস্যা সমাধানে এ এক মরিয়া প্রয়াস।কিন্তু অনিত্যতার সমস্যা সমাধানহীনই থেকে যায়। তাঁদের যাপিত জীবনের অনুভবযোগ্য বাস্তবতা ও প্রানময়তা, তাঁদের রক্তমাংসের মনুষ্যত্ব, তাঁদের একান্ত প্রেম-ভালোবাসা-দুঃখ-কষ্ট-আবেগ-অনুভূতি এবং যা কিছু অব্যবহিত জীবনে তাঁদের কাছে সত্যি প্রানতপ্ত ছিল – সবকিছুই মরুভূমির নিসীম শুন্যতায় চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। যা পড়ে আছে তা কেবলই পোড়া কাঠকয়লার তৈরি বিকট-বিকৃত কালো কঙ্কালের মতো দেখতে নগ্ন মমি মাত্র। তাও কাঙ্খিত স্বর্গে নয়, বরং – হাজার হাজার বছর পরে চুইংগাম চিবুনো – ক্যামেরা ফুটানো – চপ্পল-ফটফটানো একদল অপ্রাসঙ্গিকতার মহাক্যারিকেচারদের অবাঞ্ছিত কিলবিলানো কৌতুহলের পিচ্ছিল দৃষ্টির নিচে – মরুভূমির মাঝখানে, মিউজিয়ামের শোকেসে; অথবা কোন ডাইসেক্টিং টেবিলের উপরে ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ নামক নতুন এক প্রজাতির স্থায়িত্ব-সন্ধানীদের অধিকারহীন অশ্লীল স্ক্যালপেলের তলায়।
আমার মনে হয় না ফারাওরা নিজেদের জন্য এমন ভবিষ্যৎ চেয়েছিলেন।

(৪)
What, without asking, hither hurried Whence ?
And, without asking, Whither hurried hence !
Ah, contrite Heav’n endowed us with the Vine
To drug the memory of that insolence !
বাহারিয়া থেকে বেরুনোর পর*চলতে চলতে দুলতে দুলতে ঝাপাতে ঝাপাতে উড়তে উড়তে চলার পথে আমরা ‘ব্ল্যাক ডেজার্ট’ নামে বৃহত্তর মরুরই একটা অংশে এসে পৌঁছুলাম, আর তার কিছু পরে ‘ক্রিস্টাল মাউন্টেইন’ নামে আরেকটি জায়গায়। ‘ব্ল্যাক ডেজার্ট’ নামে কালো হলেও এবং কিছু কিছু জায়গায় একদম কালো হলেও, মোটের ওপর এর নিচের অদ্ভুত কমলাটে রঙের মাটি দেখা যায়। যদিও তার দূরবর্তী প্রতিবেশী ‘হোয়াইট ডেজার্ট’কে দেখায় প্রায় মেরু-অঞ্চলের মতই স্বেতশুভ্র তার দিগন্ত-বিস্তৃত গা-ছমছমে অলৌকিক শুভ্রশুন্যতাসহ । ব্ল্যাক ডেজার্টের মহিমা তার প্রাগৈতিহাসিক ধারালো-চিকচিকে কৃষ্ণসুন্দরী আগ্নেয়-শিলার আচ্ছাদনে। ব্ল্যাক ডেজার্ট ছাড়িয়ে আমরা ‘ক্রিস্টাল মাউন্টেনের’ কাছে কিছুক্ষনের জন্য থামলাম। নামে ‘মাউন্টেইন’ হলেও – কামে বড়সড় একটা ঢিবি আর অতিপিচ্চি একটা টিলার মাঝামাঝি কিছু। নামের শেষাংশের ক্ষেত্রে নামের দৌড় নামমাত্র হলেও, প্রথমাংশটা ঠিকই আছে। এর খ্যাতি এর গঠনে অদ্ভুত সব ব্যারাইট বা ক্যালসাইট কৃস্টালের (মতান্তরে কোয়ার্জ) কারনে। এটা নাকি প্রাগৈতিহাসিক কোন হাইড্রোথার্মাল অঘটনের কারনে সৃষ্ট একটা ‘সাবভল্কানিক ভল্ট’। কিছু কিছু জায়গা দেখলে সুপারম্যান ছবির সুপারম্যানের শক্তির আধার সেই রহস্যময় ক্রিস্টাল-গুহার কথা মনে পড়ে যায়। মরুভূমির মাঝখানে একটা টিলার মধ্যে ক্রিস্টালগুলি রোদের তেরছা আলোয় অদ্ভুতভাবে জ্বলজ্বল করছে।
স্ফটিক-পর্বত থেকে নেমে আমি কাছেই আরেকটা ছোট টিলায় উঠে পড়লাম।*এটা আবার ব্ল্যাক ডেজার্টের মত চকচকে ভীষন ধারালো কৃষ্ণসুন্দরী ব্যাসাল্টে ঢাকা। উপর থেকে চারিদিকে তাকিয়ে আমি তো স্তম্ভিত। যতদুর চোখ যায় এ যেন বাকরুদ্ধকারী হৃৎপিন্ড-শিরশিরানো, অভূতপূর্ব, অচিন্তপূর্ব এক ল্যান্ডস্কেপ – যেন বহু-সহস্র আলোকবর্ষ দূরে স্টার ওয়ার্স মুভির এম্পায়ারের কোন এক দুরবর্তী প্রানহীন অচিন গ্রহ। জীবনে এই প্রথম বুঝলাম ‘এগজটিক’ আসলে কাকে বলে!

এখানে আমরা কিছুক্ষনের জন্য যাত্রাবিরতি করলাম। সবাই ঘুরে ঘুরে এমন বিস্ফারিতনেত্রে দেখছিল যেন আদেখলা এ্যাস্ট্রোনট বা মহাকাশ পাড়ি দেয়া একদল গ্রহচারী শিল্পবোদ্ধার দল। যাত্রাবিরতি শেষে প্রদর্শণীশালা ছাড়িয়ে এরপর আমরা মরুভূমির আরো গভীরে প্রবেশ করলাম। ঘুরতে ঘুরতে আস্তে আস্তে রাত ঘনিয়ে আসলো। সময় হলো ফেরার। আমাদের পরিকল্পনা ছিল অপ্রাকৃতিক প্রদর্শণীশালাটায় ফিরে গিয়ে সেখানেই রাতের মতো তাঁবু ফেলব।

কিন্তু না, ডরো মাৎ বে~টা! আমাদের বেদুঈন এই সূচীভেদ্য অন্ধকারে অনেক ঘুরপ্যাঁচ করেও পথ ঠিকই খুঁজে পেল। হয়তো আদপেই হারায়নি। হয়তো সবটাই আমার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা।
যাইহোক, শেষমেশ আমরা অপ্রাকৃতিক গ্যালারিতে পৌঁছে গেলাম। বেদুঈনরা তাঁবু খাটানো, স্পটলাইট জ্বালানো, খাবার-দাবার তৈরি ইত্যাদিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। বাকি সবাই সারাদিনের অভিযানের পর খোলা বালুতে পেতে দেয়া চাদরের উপর পাথরের টুকরোর মত ঝপাৎ করে পড়ে গেল বেশ কিছুক্ষনের জন্য। আমি আস্তে আস্তে গুটি-গুটি পায়ে বেরিয়ে পড়লাম মরুর বুকে স্পটলাইটের আওতার বাইরে। উদ্দেশ্যহীনভাবে একা একা ঘুরতে ঘুরতে একসময় বাকিদের থেকে শ’খানেক গজ দূরে নিরব অন্ধকারের মধ্যে একটা বড়সড় বোল্ডারের পাশে মরুভূমির বুকে পিঠ ঠেকিয়ে, মাথার উপর প্রাগৈতিহাসিক তারার মেলায় হারিয়ে গেলাম। এখান থেকে আমি বাকিদেরও দেখতে পাচ্ছি – তাদের ধুলিধূসরিত ক্লান্ত উষ্ণ মুখমন্ডলগুলি – সুস্বাদু খাবারে পরিপূর্ণ মুখ, হাসিতে-ঠাট্টায়-আনন্দে উদ্বেলিত মুখ। চতুর্দিকে আঁধার-সাগরের মধ্যখানে ডুবে থাকা স্পটলাইটের আলোয় আলোকিত ছোট্ট জায়গাটা যেন ক্ষনিকের সুখে টইটুম্বুর একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
হঠাৎ মনে হলো – এইতো, আবারো নতুন কিছু বুদ্বুদ পেয়ে গেছি আমি। বুদ্বুদে-বুদ্বুদে সেতু স্থাপনের জন্য নতুন বুদ্বুদ। এ-ও নিশ্চয়ই টিকবে না, কিন্তু এখন এই মুহূর্তে এখানে তো আছে। সুতরাং, কেন হেলায় হারাবো ? তাছাড়া, এটাই বোধহয় আমার নিয়তি – আমার সর্বস্ব : এক বুদ্বুদ থেকে আরেক বুদ্বুদে মরুপথে চলতে চলতে পেছনে ফেলে আসা এবং নিসীম আঁধারে চিরতরে মিলিয়ে যাওয়া পুরনো বুদ্বুদদের প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ। চলার সময় হয়েছে বোধহয় আবার।

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/35050
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন