
জানি এতটুকু পড়ার পর অনেকে আর পড়বেন না, কিন্তু তাঁতে কি?? তাও আজ আমি লিখবো, নিজেকে ক্ষমা করার জন্য লিখবো। যদি আমার লেখার পাঠক একমাত্র আমি হই তারপর ও আমি লিখবো। আমি লিখবো একটি জলজ্যান্ত ভ্রান্ত বিশ্বাসকে নিঃশেষ করতে, পড়বেন কিনা তা একান্তই আপনার ব্যাপার।
অনেকে স্যারকে প্রভু মানেন, উনার কথাকে চির সত্য মনে করেন।উনার কথায় কোন ভুল থাকতে পারে তা বিশ্বাস করতে চান না।
আমিও বিশ্বাস করি তার লেখায় কোন ভুল নেই, ভুল আছে তার চিন্তা চেতনায়, মানসিকতায়, বিশ্বাসে। বিশ্বাস যেটা করবেন সেটাই তো উনার লেখায় ফুটে উঠবে তাই নয় কি?? মুখে বাঙ্গালিয়ানার বুলি আউরিয়ে, বুকে লালন করেন পশ্চিমা সংস্কৃতি। এখানেই উনার সাথে আমার যত মাতামাতি। অবশ্য আমার মতো একজন আনস্মার্ট তরুন মাতামাতি করলেও উনার কিছু যায় আসে না, কেননা আমাকে নিয়ে তো আর উনার কোন স্বপ্ন নেই!!!
আজ কেন এত কথা আসছে জানেন?? এত কথা আসছে
প্রথম আলোতে প্রকাশিত স্যার এর একটি লেখার জন্য। যার জবাব দিতে আজ আমি লিখতে বসেছি।
গত ৪/১১/২০১১ তারিখে প্রথম আলোতে তার একটা লেখা প্রকাশিত হয় "তরুণ প্রজন্মঃ ওদের নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখব না?"নামে।
এখানে লেখাটি পাবেন
যেখানে তিনি তরুন প্রজন্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন টি-শার্ট পরা সুদর্শন কিছু তরুণ ও উজ্জ্বল রঙের ফতুয়া পরা হাসিখুশি কিছু তরুণীর চেহারার সাথে। তার এই ধারনা এসেছে মোবাইল কোম্পানি গুলোর বিজ্ঞাপন দেখে। আমি উনাকে দোষ দিবো না।টিভি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে সমাজের বৃহত্তর অংশ বিচ্যুত যে কারো এমন ধারনা হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য নিজেকে তিনি তরুন প্রজন্মের কাছাকাছি একজন ভাবেন। তারপরও আমি তরুন প্রজন্মের একজন হয়ে বলতে পারি, তার সংজ্ঞা কোনভাবেই ঠিক না। উনার লেখায় উনি বলতে চেয়েছেন, উনার সংজ্ঞায়িত 'তরুন প্রজন্ম'কে নিয়ে তিনি সপ্ন দেখেন, কিন্তু আমি বলতে চাই টি শার্ট পড়লেই সুদর্শন হওয়া যায় না কিংবা উজ্জ্বল রঙের ফতুয়া পড়ে গগন বিদারী হাসি দিলেই বলা যাবে না সে দেশের সম্পদ, তাকে নিয়ে সপ্ন দেখো।মূলত তিনি এর মাধ্যমে তরুনীদেরকে এই বানী পৌঁছে দিলেন যে, তোমরা যদি ফতুয়া পরে রাস্তায় না বের হও তোমাদেরকে সত্যিকার অর্থে সম্ভাবনাময় তরুণী বলা যাবে না!আর যদি তাই হতো, তা হলে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কারটা বোধহয় সখ,তিন্নি,মিলা, তিশা কিংবা নাফিজারা নিয়ে আসতো।তাই বলা যায় তার কাছে তরুন প্রজন্মের চেহারাটা এমন-

এটাই কি স্যারের কাছে তরুন প্রজন্মের সংজ্ঞা

স্যার সংজ্ঞায়িত ড্রেস কোড তো এমনি হওয়া উচিত। তাই নয় কি??
তিনি লিখেছেন," বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান
বিভাগের ছেলেমেয়েরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছিল।
আমি আর আমার স্ত্রী সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। বড় বড় ছবি দেখতে দেখতে আমার
স্ত্রী আমাকে বলল, 'একটা জিনিস লক্ষ করেছ?' আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস?
আমার স্ত্রী বলল, 'ভাষা আন্দোলনে কত মেয়ে! কিন্তু একটি মেয়েও বোরকা পরে
নেই, একটি মেয়েও হিজাব পরে নেই।' আমি তাকিয়ে দেখি, তার কথা সত্যি। ষাট
বছর আগে এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বোরকা পরতে হতো না, এখন
মেয়েদের বোরকা পরতে হয়।"৬০ বছর আগে কোন পুরুষ ছাত্রী হোস্টেলে ঢুকতে পারতো না, সে সম্পর্কে যেই হোক না কেন।(যেটা আপনি করেছেন)
৬০ বছর আগে কোন মেয়ে মদ,সিগারেট, ইয়াবাতে আসক্ত ছিলো না।
৬০ বছর আগে শিক্ষকরা পরিমল ছিলো না।
৬০ বছর আগে কেউ পরিমলদের সমর্থন দিত না।
৬০ বছর আগে দেশে যৌন হয়রানি/ ইভ টিজিং হতো না।
৬০ বছরে দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, যা আগে ছিল না। ৬০ বছর আগে কোন নারী একা সমাজে চলতো না।সঙ্গী হিসাবে থাকতো বাবা, ভাই কিংবা স্বামী। এখন একজন নারী একাই সমাজে চলতে পারে।
আর বোরকা?? বড়ই হাসির কথা বললেন জনাব। বোরকা পর্দার জন্য আবশ্যক নয় এটা আপনার মতো নাস্তিক কিভাবে বুঝবে?? ডঃ জাকির নায়েক একটা কথা বলেছিলেন,"মানুষ কম জানলে হয় নাস্তিক, আর বেশী জানলে হয় আস্তিক"। আপনি বোরকা আর পর্দা দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছেন। একটাকে আরেকটার প্রতিশব্দ বানিয়ে ফেলেছেন।
বোরকা বর্তমান বাঙালি সমাজের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে মেয়েরা বোরকা পড়ে। কেন শুনেন নি, ঝিনাইদহের শৈলকূপায় মুসলমান- হিন্দু- আদিবাসী মেয়েরা স্বেচ্ছায় বোরকা পড়ে স্কুলে যায়?? এর জন্য তাদের কেউ বাধ্য করেনি। এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে এই সমাজে। আর মুসলিম মেয়েরা বোরকাকে বাড়তি পর্দা কিংবা পর্দাকে একটু শক্ত করার জন্য ব্যাবহার করে এটা আপনাকে কে বুঝাবে???
আপনার মতে বোরকা পড়লে মেয়েদের সব শক্তি, সৃষ্টিশীলতা বোরকার নিচে আটকা পড়ে যায়।আপনি বোরকা পড়া মেয়েদের নিয়ে সপ্ন দেখতে পারেন না। এটা বোরকার দোষ নয়, এই দোষ আপনার বিশ্বাসের, আপনার মানসিকতার। আপনি বিশ্বাস করতে চান না, বরকা/হিজাব পড়েও বিশ্ব জয় করা যায়। তাহলে এই মেয়েগুলোর কথা কি বলবেন??

Ruqaya al Ghasara, 100m and 200m for Bahrain

Najmeh Abtin, archery for Iran
বাহরাইনের দৌড়বিদ রুকায়া- আল-গুলশানার, ইয়েমেনের অওাসিলাহ ফিদেল
সাদ,ইরানের আর্চারি খেলোয়াড় নাজমেহ আবতিনরা কিভাবে বেইজিং অলিম্পিকে
আসতে পেরেছে?? কেন হিজাব না পড়েও বাংলাদেশ প্রমিলা ফুটবল দল, হিজাব পড়া
ইরানি ফুটবল দল থেকেও এত্ত নিচে???প্রশ্ন থেকে যায় এদের দেখে আপনি কি
বলবেন???
পরিমলের
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এই ছোট্ট আপুটি, সে কি হিজাব দিয়ে
ঘরের কোনে বসেছিলো?? তার হিজাব কি তাকে ক্ষুদ্র জায়গায় আবদ্দ করে
দিয়েছিলো??

জগন্নাথ আন্দোলনের সেই বিখ্যাত আপুটি, মনে পড়ে??
আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি, বোরকা সৃজনশীলতা শক্তি নষ্ট করে না বরং বেহায়াপনা, মাদক,লিভ টুগেদার মানুষের ভেতরের শক্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। যার মধ্যে শক্তি থাকবে, মেধা থাকবে, সৃষ্টিশীলতা থাকবে সে এমনিতেই উপরে উঠে আসবে। আপনাদের ওসব খোঁড়া যুক্তি কোন কাজের না।
"জাতীয় তেল গ্যাস ইস্যুতে যখন আমরা সাধারণ ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিলাম তখন ড: জাফর ইকবাল সাহেব একটা কলাম পর্যন্ত লিখেননি ! কেন কেউ বলতে পারবেন ?অথচ এর আগের সরকারের সময় কিন্তু ঠিকই অবাধে লিখে গেছেন তিনি।
স্যার অনেক গর্বের সাথে জানালেন, শিক্ষানীতি করার কমিটিতে আপনিও ছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক করার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন আপনিও। কিন্তু জানেন, এ শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে চরমভাবে অবহেলা, অবজ্ঞা করে লালিতকলার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার মানে সাধারণ শিক্ষার সাথে মিশিয়ে ফেলা নয়। কিন্তু এই শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার ও আধুনিকায়নের নামে যেভাবে ধর্মীয় ও আরবি বিষয়ের উপর ছুরি চালিয়েছেন তাঁতে ২০১২ সালের আগেই না সাধারণ শিক্ষার মাঝে মাদ্রাসা শিক্ষার বিলুপ্তি ঘটে। অবশ্য আপনারা এটাই চান, তাহলে আপনাদের ভ্রান্ত পাশ্চাত্য ধারণাগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
আপনারা বিশ্বাস করেন, মাদ্রাসা শিক্ষার কারণে দেশে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে??
আচ্ছা ভাই এই কথা বললে তো আজ পাগলেও হাসবে। যখন সমাজে ইভটিজিং, এইডস এগুলো থেকে বাঁচার জন্য সমাজে ধর্ম চর্চার কথা বলা হচ্ছে তখন এদের এই কথাগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বড়ই হতাশ মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে ,দেশের জন্য তারা কি করেছে বা করতে পারবে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তারা দেশকে কিছু দিতে পারে তা তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না। তাইতো সেদিন তার গালে চপেটাঘাত করলো মাদ্রাসার ছাত্র জামিল। শাবিপ্রবিতে(শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়) এবার ৭ টি বিভাগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ, কারন তারা এগুলা পারে না। আর এর পিছনে মূল হোতা হিসাবে কাজ করেছে সিএসসি ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ভর্তি পরীক্ষায় কিনা প্রথম হলো এক মাদ্রাসা ছাত্র!!! সত্যি অবাক করা বিষয়, তাই নয় কি???

এবার আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। কেন তিনি তারুন্যের সংজ্ঞাটা এভাবে দিলেন তা পরিস্কার করি। তার মেয়ের নাম ইয়েশিমা ইকবাল , জানা যায় তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে এখন হার্ভার্ড থেকে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন। তার স্বাভাবিক জীবনের কয়েকটি ছবি শেয়ার করছি-

জাফর কন্যার বাঙালীয়ানা পোশাক ও আচরনে ফুটে উঠেছে। এই জাফর ইকবালেরাই বাঙালীত্ব কপচিয়ে হাজারো তরুনের ব্রেন ওয়াশ করে

প্রগতিশীল হতে হলে মদ খাওয়া ধরতেই হবে। বাবা জাফর ইকবাল কি এই শিক্ষাই দিয়েছেন কন্যাকে?

আহারে বাঙালি সংস্কৃতি লালনের অবস্থা??? খাড়া গজব পড়ুক এদের উপর

এটা স্যারের তরুণ প্রজন্মের ড্রেস কোড
হয়তো আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন, আরেকজনের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন
তোলার কি আছে?? অনেক কিছু আছে। তিনি যদি বোরকার অন্তরালে থাকা মা- বোনরা
দেশের জন্য কি করেছে , কতটুকু করেছে, কাউমি মাদ্রসার আলেম ওলামারা দেশের
জন্য কি করেছে বা কি করতে পারে এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাহলে আমাদের ও
অধিকার আছে , মগজে-বুকে--মনে পশ্চিমা সংস্কৃতি লালন করা তার মেয়ে দেশের
জন্য কি করার ক্ষমতা রাখে?? তিনি কি পারেন তার মেয়েকে বাঙালি সংস্কৃতিতে
ফিরিয়ে আনতে?? না, তিনি পারেন না। তাই তো সমাজকে গড়তে চাচ্ছেন তার
মেয়ের লাইফ স্টাইলের মতো করে। সবাইকে স্মার্টনেসের নামে অশ্লীলতার বয়ান
দিয়ে যাচ্ছেন।অনেকটা শিয়ালের গল্পের মতো,গল্পটি দিয়ে শেষ করছি আজকের লেখাঃ
একবার এক শিয়াল গভীর বনে শিকার করতে গিয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে। অনেক কষ্টে উদ্ধার পেলেও হারায় তার লেজ। মনের কষ্ট নিয়ে স্বজাতির কাছে ফিরে যায়,মান সম্মান রক্ষা করতে নতুন বুদ্ধি ফাঁদে লেজকাটা শিয়াল। শিয়াল সম্প্রদায়কে একসাথে ডেকে নিজেকে আধুনিক হিসাবে প্রকাশ করতে তার লেজ কেটে ফেলেছে বলে ঘোষণা দেয় এবং সবাইকে স্মার্ট হওয়ার জন্য তাদের লেজ কেটে ফেলার উপদেশ দেয়। কিন্তু এক বৃদ্ধ শিয়াল তার লেজ কাটার সত্য ঘটনা প্রকাশ করে দিলে বন ছেড়ে পালাতে হয় লেজকাটা শিয়াল পণ্ডিতের।
উৎসর্গঃ সময়ের লেজকাটা শিয়াল পণ্ডিত মোহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারকে।
(মনে রাখবেন, উন্নতি হলে নিজ সংস্কৃতি, ধর্ম দিয়েই সম্ভব। অন্ধভাবে কাক হয়ে বকের হাঁটা অনুকরন করতে গেলে পাছে হয়তো কাকের হাঁটাও ভুলে যাবেন। তাই সাধু সাবধান।)
** লেখাটা শেয়ার করা উচিত নয় কি?? ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন