
ল্যাপল্যান্ড, কি অবাক করা নাম! শুনলেই মনে হয় সুমসাম নীরবতার মাঝে ডুবে আছে প্রকৃতি, দিগন্ত ছোঁয়া সারি সারি বৃক্ষরাজি, ইতস্তত চরে বেড়ানো বলগা হরিণের পাল, শিকারের প্রচেষ্টারত তুষার পেঁচার উড়াল, এর মাঝেই মানবজাতির প্রতিনিধিত্বকারী সামি সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ঘেঁষা জীবন।

বিশ্বের সর্ব উত্তরের ৫ দেশের তিনটির ( সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে) সর্বউত্তরের ভূখণ্ড নিয়েই কিন্তু ল্যাপল্যান্ড, এর পূবেই আবার শুরু হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনভূমি তাইগা যা সমগ্র সাইবেরিয়া দখল করে ছুঁয়েছে জাপান সাগর। ল্যাপল্যান্ডে যাবার সৌভাগ্য একাধিকবার হলেও তা সবসময়ই ছিল হাড় কাঁপানো শীতে (যেখানে প্রায়ই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস), যদিও সেখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত দ্রষ্টব্য মেরু জ্যোতি (অরোরা বোরিয়ালিস) দেখতে হলে জমাট শীতকালের কোন বিকল্প নেই তারপরও ল্যাপল্যান্ডের আসল ভাষা তো বোঝা যায় কেবলমাত্র ভরা গ্রীষ্মে! যখন দুকুল ছাপানো সবুজ প্লাবিত করে রাখে হাজার হাজার বর্গমাইল, ফিরে আসে পরিযায়ী পাখির দল।
২০০৮-এর গ্রীষ্মে কেবল ফিরেছি আল্পস পর্বত ডিঙ্গিয়ে, তার পরের দিনই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রীষ্মের ল্যাপল্যান্ডের রূপসুধা উপভোগের জন্য আমাদের নব যাত্রা শুরু, সঙ্গী বহু অভিযানের পোড় খাওয়া দুই সহযাত্রী সহোদর ভাই অপু এবং অসহোদর বড় ভাই শিপু ও শিপু ভাইয়ের গাড়ী।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথম দিনের বিরতি টানা হল হাজার হ্রদের দেশের লেকল্যান্ড বলে বিখ্যাত এক অঞ্চলে, যেখানে শুধুই হ্রদ আর অবারিত বনের প্রাচুর্য। ফিনল্যান্ডের দুই লক্ষ পাঁচ হাজার হ্রদের সবচেয়ে বড় হ্রদ সাইমার তীরেই বন্ধুর বাড়ীতে নিশিযাপন করা গেল এযাত্রা।

বন্ধুর পরিবার আছে প্রকৃতি প্রেমে মজে, তাদের চিঠির বাক্স বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে, সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীও মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে!

পরের রাত্রিও আরেক বন্ধুর আস্তানায় কাটিয়ে আমরা পৌছালাম আর্কটিক বৃত্তের অভ্যন্তরে ( আর্কটিক সার্কেল হচ্ছে উত্তর মেরুকে কেন্দ্র করে আঁকা কল্পিত এক বৃত্ত বা অঞ্চল যার ভিতরে গ্রীষ্মকালে অন্তত একদিন পুরোপুরি ২৪ ঘণ্টা সূর্য ডুববে না এবং শীতকালে অন্তত একদিন সূর্য উঠবে না, আবার এর যত উত্তরে যেতে থাকবেন দিন ও রাত্রির পরিমাণ সমানুপাতে বাড়তে বা কমতে থাকবে, ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রবিন্দু উত্তর মেরুতে ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত।)।
দেখা হল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিখ্যাত বাসিন্দা ফাদার ক্রিসমাস বা সান্তা ক্লজের সাথে, তার অফিসিয়াল আস্তানা কিন্তু এখানেই! সারা বছর কয়েক মিলিয়ন চিঠি আছে এইখানে সমগ্র বিশ্বের শিশুদের কাছে থেকে, সবাই সান্তা ক্লজকে জানায় তাদের ইচ্ছাপূরণের স্বপ্নের কথা। তবে এই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই চলছে রমরমা সান্তা ক্লজ বাণিজ্য, ছবি তোলা থেকে শুরু করে চিঠি পাঠানো সবখানেই চড়া দাম রেখে আগন্তকদের পকেট হালকা করার ব্যবস্থা বরাবরের মতই।

সেখান থেকেই আমাদের প্রবেশ মূল ল্যাপল্যান্ডে, যেখানকার জনবসতি সারা গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে কম ঘনত্বের একটি, মানুষের দেখা মেলে না বললেই চলে, কেবল আদিগন্ত বিস্তৃত উচুনিচু পাহাড় আর বনের সাম্রাজ্য, অবশ্য মাঝে মাঝেই রাস্তা আটকে আমাদের অশেষ করুণার করল যেন পোষ মানা বলগা হরিণের পাল! গাইড বই থেকে জানলাম এরা প্রায়শই এভাবে রাস্তা আটকে ট্র্যাফিক জামের সৃষ্টি করে। তাদের প্রত্যেকের কানে আলাদা আলাদা ট্যাগ লাগানো যাতে পশুপালকদের নিজের হরিণ চিনতে সমস্যা না হয়, তবে এখনো কানের কাছে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে চামড়া কেটে নেবার পদ্ধতিই বেশী জনপ্রিয়। ল্যাপল্যান্ডের অধিবাসীদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান তো বটেই আরও অন্যান্য জিনিসের জন্য তারা আদিকাল থেকে বলগা হরিণের উপর নির্ভরশীল।

প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গাড়ী চালিয়ে পৌঁছানো হল সমগ্র ল্যাপল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হ্রদ ইনারির পাড়ে, গ্রীষ্মের সূর্য তখনো সাথী আমাদের, অবশ্য তার নিষ্ক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আজ থেকে আমাদের তাবু বাস শুরু। সবই ঠিক আছে, তাবুর ভিতরে গেলে নিশীথ সূর্যের আলো আর হ্রদের তীরের ধারালো বাতাস দুইকেই ঠেকানো যায় কিন্তু আমাদের দুই ভ্রমণসঙ্গী যে বিশ্ব নাসিকাগর্জন প্রতিযোগিতায় গেলে পালাক্রমে সোনা ও রূপা জিতবে সেই ধারনাই বদ্ধমূল হতে থাকল প্রতি পলে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে সাথে কানের গোঁজার জন্য সবসময় বিশেষ বস্তুটি সাথেই থাকে কিন্তু প্রয়োজনের সময় সাধারণত যা হয় তাই হল।

ফিনিশ ল্যাপল্যান্ডের এই অঞ্চলে অসংখ্য অগভীর নদীতে ভরা। এদের আরেক নাম স্বর্ণ নদী, কারণ এই নদীতে প্রাপ্ত সোনার উপর ভিত্তি করেই বেশ কজন স্বর্ণ অনুসন্ধানী জীবিকা নির্বাহ করেন। পথে পড়ল ছোট্ট শহর ইভালো, শুনেছিলাম অনেক সময় দরকারি খাদ্য পানীয়ের দাম মেটাতে প্রকৃতি ছেড়ে লোকালয়ে এসে পড়া স্বর্ণ অনুসন্ধানী টাকার বদলে সোনার গুড়ো ব্যবহার করে থাকে, সেই বুনো পশ্চিমের দিনগুলোর মত!

সেইদিনই আমরা নরওয়ের ল্যাপল্যান্ডে প্রবেশ করি। দৃষ্টিসীমায় আসে বরফ ছাওয়া পর্বতমালা আর অতল জলের ফিয়র্ড।

নরওয়ের এই প্রাকৃতিক বিস্ময় সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয় প্রায় ফি বছরই, জাদুময় সম্মোহনী আহ্বান এর। পর্বত আর মহাসাগরের মিলন, সেই সাথে গাঢ় সবুজ উপত্যকা, গভীর খাড়ি, অফুরানে বনের সমন্বয় যে আর কোথাও নেই বললেই চলে।


ভ্রমণের এক পর্যায়ে আমাদের গন্তব্য নর্ড ক্যাপ, জনপ্রিয় ধারণা এটি আমাদের গ্রহের উত্তরতম ভুখণ্ড, এর পরপরই উত্তর মহাসাগরের হিম রাজ্যের শুরু। সেই হিসেবে কোন স্থল যানে চেপে যাত্রা করলে এটিই সবচেয়ে উত্তরে গন্তব্য। এক কুয়াশা ঘেরা বিকেলে ভূভাগের উত্তুরে বিন্দুটি অক্ষিগোচর হল, ধাতব একটা অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ নির্দেশ করা গোলক এর চিহ্ন, তাকে ভিড়েই পর্যটকদের রমরমা ভিড়।

শিপু ভাই আর অপুর হাসি দেখে মনে হল আমরা মঙ্গলে না হলেও চাঁদে পৌঁছেছি নির্ঘাত!

আমাদের বুড়ো পৃথিবীর ডাঙ্গার এই শেষ, নিচে তাকালেই বরফ মহাসাগরের হিম অস্তিত্ব চোখে পড়ে, মনে পড়ে যায় সেই বরফ সাগরের মাঝেই উত্তর মেরুতে অভিযানের কথা, আবার দেখা হবে কি কোনদিন সেই ভয়ংকর সুন্দর বন্ধুর স্থানটির সাথে?

সেদিনের রাত্রিবাস নিয়ে সবার উৎকণ্ঠা চরমে, অপুর যুক্তি যে রকম গাঢ় কুয়াশা ফেনিয়ে উঠছে, নিজের হাতই দেখা মুস্কিল, এই অবস্থায় সরু পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে নিচে নেমে ক্যাম্প এলাকার খোঁজ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, তাবু খাটিয়ে আজকের মত সেখানেই থাকা যাক। আসলেই রাস্তা অস্তিত্ব বোঝাই মুস্কিল, তার উপর আসার সময়ে দেখেছি মুখবাদ্যান করে থাকা বিদঘুটে সব খাঁদ, একবার পিছলালে আর দেখতে হবে না!

যা হোক, আলাপ আলোচনার পরে নিচের নামারই সিদ্ধান্ত হল, মূল কারণ নর্ড ক্যাপের ঠাণ্ডা ধারালো চাবুকের মত বাতাস। সেই রাতের আস্তানা ছিল বিশ্বের উত্তরতম ক্যাম্পিং এলাকা, এখানে এই উত্তর বাণিজ্য মহা জমজমাট, যেইখানেই যায় সেটিই বিশ্বের উত্তরতম কিছু একটা- দোকান থেকে শুরু করে ম্যাকডোনাল্ডস, সব!
পরদিন আমাদের গন্তব্য ছোটকাল থেকে বইয়ের খসখসে পাতায় পড়ে আসা কিংবদন্তীর এক জনপদ, যার নাম সেই তখন থেকে ভবঘুরে হবার জন্য ফিসফিস করে অনুপ্রেরণা যোগাত, সেই বদ মতলবে বইয়ের চারপাশের জগৎ পরিণত হত অদ্ভুত মায়াময় এক ভুবনে। এককালের তিমি শিকারিদের প্রাণকেন্দ্র হ্যামারফেস্ট!

হ্যামারফেস্ট নামটি যেন সবসময় হ্যাঁচকা টান মেরে এক অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যায় আমাদের, এক রহস্যময় জগতের অংশ যেন সে আর তার অধিবাসীরা। নামের চেয়ে কোন অংশেই কম নয় সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে এই প্রাচীন শহর।
শহরের ঢোকার অল্প আগেই নয়নাভিরাম এক ক্যাম্পিং-এর ১৯ নং কেবিনে স্থান হল আমাদের, সেখান থেকে সারা শহর যেমন দেখা যায়, তেমন উপভোগ করা যায় সমুদ্রের কান্তিময় রূপ।

দূর সমুদ্রে আগুনের চিহ্ন প্রমাণ করছে তেলের খনির অস্তিত্ব, ঘোষণা করছে নরওয়ের বিশ্বের অন্যতম ধনী ও ব্যয়বহুল দেশ হবার কারণ।

যাত্রাপথের ক্লান্তিতে সেদিন আর শহরে বেশী ক্ষন না ঘুরে নিজেদের কুটিরেই ফেরা হল, অতিরিক্ত প্রাপ্তি অপুর হাতের সুস্বাদু খিচুড়ি। সেটাই পেট পুরে খেয়ে সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের মত সন্ধ্যা নামা দেখতে জাকিয়ে বসলাম কাঠের পাটাতনে।

হ্যামারফেস্টে টো টো করে ঘুরবার এক পর্যায়ে স্থানীয় জাদুঘরে দেখা হল আর্কটিক প্রাণী লেমিং-এর সাথে, যার দল বেঁধে আত্নহত্যা করা নিয়ে অদ্ভুত সব গল্পের ফানুস তৈরি করেছে মানব জাতি, বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিবর্জিত সেই গল্পগাথা।

এমন ভাবেই দেখা হল নরওয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত অধিবাসি গর্তবাসী ট্রোলের সাথে। দেখেই মন হল, এই লোককথার চরিত্রের সঙ্গ বাস্তবে এড়িয়ে চলাই ভাল হবে।

শহর থেকে ফেরার পথে আগের রাতের খিচুড়ির জাদুতেই হবে অপুর শখ হল মেরু ভালুকের কান ধরে ছবি তোলার, তার শখ মেটাতে হ্যামারফেস্টের প্রতীকের সামনে যাত্রা বিরতি করতে হল।

এরপর আমাদের যাত্রা কেবলই দক্ষিণে, পিছনে পড়ে রইল যত ঠাণ্ডা, মেঘলা, গুটিসুটি প্রকৃতি। এখন সামনে কেবলই রোদেলা দিন। গম্ভীর পাহাড়ও যেন হেসে উঠেছে উদ্ভাসিত আলোকে।



আর ফিয়র্ড ! আহা, সে রূপ কি ভাষায় বর্ণনা করবার! কত অপরূপ রঙে যে সাজে সে দিন ভর, মাঝে মাঝে মনে হয় সাগরে নীল গুলে দেওয়া হয়েছে, কখনো সবুজের মেলা আবার ধূসর বিষণ্ণতা।


কিছু কিছু স্থান দেখে মনে হল আমরা পিটার প্যানের বন্ধু, এসেছি নেভারল্যাণ্ডে, বয়স বাড়ে না এখানে কোনমতেই। চির সবুজের, চির তারুণ্যের দেশে।

নারভিক শহরে প্রস্তাব মিলল সাগরে তিমি দর্শনের, বিফলে মূল্য ফেরত মানে ঠিক ফেরৎ না দিলেও তিমি না দেখানো পর্যন্ত নিয়েই যাবে আমাদের ক্রমাগত। সময়ের অভাবে এযাত্রা সেটা করা হল না কিন্তু ভাবলাম মহাসাগরের পারেই আছি, তিমির সাথে মোলাকাত হতেই পারে।
অবশেষে দেখা মিলল আটলান্টিকের, কি দারুণ, কি স্বচ্ছ!

থেকেই থেকেই দেখা গেল একই জলে ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্রোতের অপূর্ব মিলন।

পথের অন্যতম অভিজ্ঞতা ছিল প্রায় ভাইকিংদের আদলে তৈরি এক জেলে গ্রাম দর্শন, সেখানকার ছাদগুলো দেখেই সবুজ ঘাসে আবৃত। জেলেগ্রাম বিধায় সারি সারি স্যামন মাছের শুঁটকি ঝুলছে যত্রতত্র। এমন বুনো বাতাসে সবার হজম শক্তি গেছে কয়েকগুণ বেড়ে, তাই নিশীথ সূর্যের আলোতেই চলল শুঁটকি সংগ্রহ, রন্ধন ও ভোজন পর্ব। দারুণ খেতে! অনেক সময় মনে হল মাংসের জার্কি খাচ্ছি এমন পুরু!

যাত্রা বিরতি দিতে হচ্ছে দিনে অসংখ্য বার- খরস্রোতা নদীর উপরের ঝুলন্ত সেতু, ভীম বেগে বয়ে চলা জলপ্রপাত, কল্পলোকের ফিয়র্ড, যেখানেই দুদণ্ড থামতে, দেখতে, জানতে মন চায়।




এভাবেই বার কয়েক দেখা হল আসল ল্যাপল্যান্ডের অধিবাসি সামি সম্প্রদায়ের সাথে, তারা ব্যস্ত তাদের মূল সম্পদ বলগা হরিণের চামড়া, হাড়, ক্ষুর, মাংস ইত্যাদির প্রক্রিয়াজাত বস্তুর বিপণন নিয়ে। আমাদের আধুনিক বিষাক্ত যন্ত্রসভ্যতা এই নিষ্পাপ নিভৃতচারীদেরও করে ফেলেছে মুদ্রারাক্ষসের উপর নির্ভরশীল।

বেশ কবার ফেরি পেরোতে হল সামনে চলা পথ হঠাৎ শেষ হয়ে আসায়, কখনও বা পাহাড় ফুঁড়ে চলা সুড়ঙ্গই আমাদের ভরসা, এমন ভাবেই আগমন সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডে। এটিই আমাদের শেষ গন্তব্য, এর মাধ্যমেই তিন দেশের ল্যাপল্যান্ড গ্রীষ্মে ভ্রমণের স্বপ্নে দোরে হানা দিতে পারলাম সবাই। পটে আঁকা ছবির মত কিছু কটেজে স্বপ্নের মত উম্মুক্ত আকাশের নিচে ঠাই হল আমাদের। কি অপার্থিব নির্জনতা ঘিরে ধরত আমাদের দিবা-রাত্র। যদিও ল্যাপল্যান্ডের কুখ্যাত মশাবাহিনীর কনসার্ট চলতই ক্রমাগত, তারপরও।

গ্রীষ্মে উত্তুরে দেশগুলোতে ভ্রমণের এই এক মহা সুবিধে, অনেক সময় পাওয়া যায় দেখার এবং সামনে এগোনোর। মধ্য রাত পেরিয়েও আমাদের যাত্রা চলতে থেকে অবিরাম, সঙ্গী হয় সূর্যের সাথে সাথে মৌসুমির কিন্নরী কণ্ঠের সৃষ্টি, আমি শুনেছি সেদিন তুমি—

অবশেষে পাঁচ হাজার কিলোমিটার ব্যপী যাত্রার শেষ প্রান্তে এসে ফিনল্যান্ডে পুনরাগমন, চোখে পড়ল পরিচিত ভূপ্রকৃতি আর জানালার পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া অপূর্ব দৃশ্যমালা।

মনে হচ্ছিল সবসময় প্রিয় কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা—
I often see flowers from a passing car
That are gone before I can tell what they are.
I want to get out of the train and go back
To see what they were beside the track.
I name all the flowers I am sure they weren’t;
Not fireweed loving where woods have burnt–
Not bluebells gracing a tunnel mouth–
Not lupine living on sand and drouth.
Was something brushed across my mind
That no one on earth will ever find?
Heaven gives its glimpses only to those
Not in position to look too close.
কিন্তু সেই সাথে এটাও মনে হল আমরা কি আসলেই বিশুদ্ধ সৌন্দর্যকে ছুতে পারি না! কেন নয়, গত দুই সপ্তাহ যে অপরূপ স্বর্গরাজ্যে ছিলাম আমরা প্রতিটি মুহূর্ত, এর বেশী কি ছুয়ে, ছেনে দেখতে পারি আমাদের এই অপরূপ গ্রহটাকে?
http://www.sachalayatan.com/tareqanu/42072
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন