যে ভূমিকা না লিখলেই নয়
ভাল একটা নাম চাই! ভাল'র সঙ্গা কি? অবশ্যই 'আনকমন' হতে হবে। নবজাতকের নাম রাখতে গিয়ে মোটামুটি সব বাবা-মা' ই আমার সাথে অন্তত এ ব্যাপারে একমত হবেন। মুসলিম হলে তো কথাই নাই। কারণ, আল্লাহ রোজ কিয়ামতের মাঠে বাবার নামের সাথে মিলায়ে বান্দাকে ডাকবেন। সুতরাং খারাপ বা বিদঘুট অর্থওয়ালা নাম ধরে আল্লাহ ডাকুক তা কেউই চাইবে না। যেমন-এই "জামাল মিয়া" যার মানে এই "একশো উট"! প্রথম 'দর্শনের' একটা গুরুত্ব আছে না?
একটা স্ট্যান্ডার্ড নামের তিনটা অংশ থাকে বলে অনেকেই মনে করেন। ফার্স্ট, মিডল এবং লাস্ট নেইম। প্রথম অংশে
তার নিজের নাম রাখা হয়। মঝাখানে বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়। শেষ নাম বংশ বা সার (sur) নাম বলে পরিচিতি পেয়েছে। অনেকেই আবার মাঝখানটা স্কিপ করে সরাসরি লাস্ট নামে চলে যান।
আমাদের নাম বিভ্রাট
আমরা অনেকেই 'জ' ও 'য' (অর্থাৎ 'জিম' এবং 'যা'), 'স' ও 'ছ', 'ও' বা 'ও-কার' ইত্যাদি উচ্চারণের ফারাক বুঝতে পারি না। যার কারণে অন্যের কাছে বা ভিন দেশীদের আমাদের ভিনদেশীয় নামের উচ্চারণ ঠিক করে বলতে পারিনা। যেমন, 'জাহাংগীর' বা 'যায়েদ' বলার সময় 'জ' ও 'য' উচ্চারণ একইভাবে মেরে দিই। অর্থাৎ শুরুতেই গন্ডগোলটা বাধিয়ে ফেলি। আমার এক্স কলিগ (তিনি কিন্তু পিএইচডি)-এর Zoo বলা তো আমার অফিসের কেউই বুঝলো না। শেষমেষ লিখে বোঝাতে হয়েছিল।
টেলিফোনে আমার রুমমেট ইউটিলিটি বিল দিতে গিয়ে নিজের নাম 'সাজ্জাদ' উচ্চারণ করল এভাবে, এস এ জি জি এ ডি (আমরা যে বর্ণমালাকে 'যেড' বলে জানি তা আমেরিকায় হয়েছে 'যি')। ক'দিন পর বিলে নাম এল 'সাজ্ঞাদ' হয়ে, 'সাজ্জাদ' আর বানানো গেল না!
'আঈন' তো ফেলে দেয় মহাবিপদে। গলার মাঝখানে মাইরপ্যাচ করে 'নামের ভিতর 'আঈন' লুকিয়ে থাকা কাউকে ডাকা আমাদের ধাতে কুলায় না। যেমন, মা'মুন, মাসঊদ। আমরা ডাকি 'মামুন', 'মাসুদ' বলে। আমার ইরাকী প্রতিবেশী আমার ভায়রার নাম 'মামুন' শুনে বুঝতেই পারে না এটা কোন নাম। অথচ এটা কিনা ওদের কাছ থেকেই এসেছে। কত না গল্প বাগদাদের খলীফা মা'মুনুর রশীদকে নিয়ে! বুঝলাম 'আঈন'-এর জটিলতায় আমার ভায়রা আটকে গেল!
এ সমস্যা শুধু আমাদের না। ভারতীয় ও পাকিস্তানীদেরও।
যেমন আমার মেয়ের সাথে আরবী পড়তে যায় 'রিদা'। আমাদের মসজিদের জর্ডানী ইমাম বললেন, এইটা তো কোন নাম না, এইটা হবে (একটু টেনে, মানে মাদ্দ দিয়ে) 'রিদআ'!
আমার আরেক পাকিস্তানী প্রতিবেশীর ছেলের নাম 'সাইফান' শুনে ইমাম সাহেব সাইফানের বাপকে জিজ্ঞেস করলেন, 'ও তো একটা সাইফ। একা হয়ে দুইটা সাইফ হয়ে গেল কেমনে?'
সাইফানের বাবা কাইয়ুম বললেন, একটু ব্যতিক্রম নাম রাখতে গিয়ে এই কাজটা হয়ে গেছে। ভুলটা পরে বুঝতে পেরেছে আমাদের কাইয়ুম ভাই। 'সাইফ' মানে হল 'তরবারী' বা একটা তরবারী, 'সাইফান' মানে হল, 'দুইটা তরবারী'!
দেশী ভাই হালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলে ও মেয়ের নাম কি?
উনি বললেন, 'হাদীন' আর 'রাদীন'
বললাম, মানে?
উনি বললেন, "আল্লাহ্র 'হাদী' নামের শুদ্ধ উচ্চারণ এটা। হাদীর শেষে দুইটা 'যের' বা 'কাসরা' আছে না? এটা আসলে 'হাদীন' হবে।" রাদীনেরও ওরকম ব্যাখ্যা দিলেন।
বললাম, হুম, জব্বর জিনিস আবিষ্কার করলেন!
আমার ভারতীয় প্রতিবেশী মুজাম্মিল বলে আমরা মানে বাংলাদেশীরা নামের ভিতর নাকি 'উল', 'উর' বা 'উ -জাতীয় শব্দ' বেশী যোগ করি। আর ওরা করে 'ইল' বা 'ইর' বা 'ই-যুক্ত' শব্দ। যেমন, আমাদের 'ফারুকুর রহমান', 'মুজিবুর রহমান', 'আশরাফুল ইসলাম' ইত্যাদি। ওদের নাকি এরকম নাই। আছে 'তুজাম্মিল', 'মুজাম্মিল', 'আব্দুল কালাম' ইত্যাদি।
'আরিয়ান' নাম নিয়ে গবেষণা
হঠাৎ করে এই নামটা বেশ পপুলারিটি পেয়েছে। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। আমার এক নিকটাত্মীয়া তার ছেলের নাম রেখেছেন 'আরিয়ান'। আমার এক এক্স ভারতীয় (গুজরাটি) কলিগ যতীন মিস্ত্রী তার ছেলের নাম রেখেছে 'আরিয়ান'। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহেল ওদের দ্বিতীয় ছেলের নাম এই দুই সপ্তাহ আগেই রাখল আরিয়ান। ফেসবুকে আরিয়ানের ছবি দিতেই সোহেলের স্কুল জীবনের আরেক ক্লোজ ফ্রেন্ড আজাদ বল্ল, ওর ছেলের নামও তো 'আরিয়ান'। কি চমৎকার মিল! কেউ কারো কাছে না শুনে সবাই এমন নাম রেখে ফেলেছে। পরে জানলাম শাহরুখ খান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী গৌরী খানের ছেলের নামও নাকি 'আরিয়ান'!
আমি একটু 'গবেষণা' শুরু করে দিলাম। এই নামটা আসল কোত্থেকে? আমার আত্মীয়া বললেন, ইসলামী নামের বই থেকে পেয়েছেন। যতীন বল্ল, এটা ওদের এক 'গড'-এর নাম। সোহেল চমৎকার একটা ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড বল্ল। সেখানে যাওয়ার আগে আমাদের মসজিদের আরেক ফিলিস্তিনী ইমামের সাথে আমার কথোপকথনটা আপনাদের বলে নেই। উনি তখন কি যেন লিখছিলেন।
আমিঃ (সালাম ও অনুমতি নিয়ে) আরিয়ান কি ইসলামী নাম?
ইমামঃ না।
আমিঃ ওকে। বুঝলাম এটা কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বের নাম না। তবে আরবীতে এই নাম আছে কি?
ইমামঃ না।
আমিঃ আপনি কি শুনেছেন এই নাম কখনো?
ইমামঃ হ্যাঁ।
আমিঃ (অনেক আশা ও আগ্রহ নিয়ে) তাহলে বলেন এইটা কোন গোছের নাম তাহলে?
ইমামঃ এইটা 'ইহুদী' নাম!
আমিঃ (ধপাশ করে পড়ে গিয়ে) মানে? ইমামঃ এইটা সেমেটিক, হিস্ট্রিক্যাল নেইম!
আমিঃ আমার পরিচিত অনেক ভাল মুসলমানই রেখেছে এই নাম।
ইমামঃ ইট্স অলরাইট।
ইমাম সাহেবের সাথে কথা শেষ করে আমার বন্ধুকে ফোন দিলাম।
- দোস্ত, কংগ্রাচুলেশন! নামটা তো বেশ রেখেছিস। তোরা কি আগেই এইটা ঠিক করে রেখেছিলি?
- হ্যাঁ। এটা অনেক খেটে-খুটে জোগাড় করারে দোস্ত।
- তা এই নামটা কোন ভাষার? কিভাবে পাইলি? মানেই বা কি?
- আরবীর। ইসলামী সাইট থেকে পাইছি। মানে হল 'সাহসী', বা 'বীর।
- ভেরী গুড। কোনো আ্যরাবিয়ান আলেমের কাছে শুনিছিলি কি? (ওর পাশের মসজিদটা হল
আরবভাষীদের দ্বারা পরিচালিত)
- না।
আমি আমার বন্ধুকে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে আমার কথোপকথনগুলো তুলে ধরলাম।
সব শুনে ও বল্ল, "না এটা ঠিক না। এটা ইহুদী নাম না। উনি হয়তো Aryan'র কথা বলেছেন, আমার ছেলের নাম Arian - এইটা মূলত পারসিয়ান নাম। আফগান আর ইরানের বর্ডারের যে প্রদেশটা আছে, ওই এলাকার লোকেরা আফগান না ফার্সী ভাষায় কথা বলে। ওখানকার এক পাহলোয়ান নাম ছিল 'আরিয়ান'।"
আমি বললাম, "ভেরী গুড। আমাদের আরিয়ানও ইসলামের পাহলোয়ান হবে ইনশাল্লাহ্।" এভাবেই কথা শেষ করে পরেরদিন আমার ইরানী কলিগ এলনাযকে আরিয়ান নামের আমার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলাম।
এলনায বল্ল, হ্যাঁ, আরিয়ান নাম ইরানে অনেক আছে।
বললাম, গ্রেট। এটা মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত নিশ্চয়ই (কারণ আমি জানি ওদের দেশে অনেক ইহুদী আছে)? বানান বলবে কি?
এলনায বল্ল, "নট নেসেসারিলি। অমুসলিমদের মধ্যেই মূলত এ নামের প্রচলনই বেশী। বানান হল, Arian।"
আমি আমার বন্ধুকে এ ব্যাপারে আর কিছুই বললাম না।
(চলবে)
____________________________________________
মূল লিঙ্কঃ http://sonarbangladesh.com/blog/shahin/75985
ভাল একটা নাম চাই! ভাল'র সঙ্গা কি? অবশ্যই 'আনকমন' হতে হবে। নবজাতকের নাম রাখতে গিয়ে মোটামুটি সব বাবা-মা' ই আমার সাথে অন্তত এ ব্যাপারে একমত হবেন। মুসলিম হলে তো কথাই নাই। কারণ, আল্লাহ রোজ কিয়ামতের মাঠে বাবার নামের সাথে মিলায়ে বান্দাকে ডাকবেন। সুতরাং খারাপ বা বিদঘুট অর্থওয়ালা নাম ধরে আল্লাহ ডাকুক তা কেউই চাইবে না। যেমন-এই "জামাল মিয়া" যার মানে এই "একশো উট"! প্রথম 'দর্শনের' একটা গুরুত্ব আছে না?
একটা স্ট্যান্ডার্ড নামের তিনটা অংশ থাকে বলে অনেকেই মনে করেন। ফার্স্ট, মিডল এবং লাস্ট নেইম। প্রথম অংশে
তার নিজের নাম রাখা হয়। মঝাখানে বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়। শেষ নাম বংশ বা সার (sur) নাম বলে পরিচিতি পেয়েছে। অনেকেই আবার মাঝখানটা স্কিপ করে সরাসরি লাস্ট নামে চলে যান।
আমাদের নাম বিভ্রাট
আমরা অনেকেই 'জ' ও 'য' (অর্থাৎ 'জিম' এবং 'যা'), 'স' ও 'ছ', 'ও' বা 'ও-কার' ইত্যাদি উচ্চারণের ফারাক বুঝতে পারি না। যার কারণে অন্যের কাছে বা ভিন দেশীদের আমাদের ভিনদেশীয় নামের উচ্চারণ ঠিক করে বলতে পারিনা। যেমন, 'জাহাংগীর' বা 'যায়েদ' বলার সময় 'জ' ও 'য' উচ্চারণ একইভাবে মেরে দিই। অর্থাৎ শুরুতেই গন্ডগোলটা বাধিয়ে ফেলি। আমার এক্স কলিগ (তিনি কিন্তু পিএইচডি)-এর Zoo বলা তো আমার অফিসের কেউই বুঝলো না। শেষমেষ লিখে বোঝাতে হয়েছিল।
টেলিফোনে আমার রুমমেট ইউটিলিটি বিল দিতে গিয়ে নিজের নাম 'সাজ্জাদ' উচ্চারণ করল এভাবে, এস এ জি জি এ ডি (আমরা যে বর্ণমালাকে 'যেড' বলে জানি তা আমেরিকায় হয়েছে 'যি')। ক'দিন পর বিলে নাম এল 'সাজ্ঞাদ' হয়ে, 'সাজ্জাদ' আর বানানো গেল না!
'আঈন' তো ফেলে দেয় মহাবিপদে। গলার মাঝখানে মাইরপ্যাচ করে 'নামের ভিতর 'আঈন' লুকিয়ে থাকা কাউকে ডাকা আমাদের ধাতে কুলায় না। যেমন, মা'মুন, মাসঊদ। আমরা ডাকি 'মামুন', 'মাসুদ' বলে। আমার ইরাকী প্রতিবেশী আমার ভায়রার নাম 'মামুন' শুনে বুঝতেই পারে না এটা কোন নাম। অথচ এটা কিনা ওদের কাছ থেকেই এসেছে। কত না গল্প বাগদাদের খলীফা মা'মুনুর রশীদকে নিয়ে! বুঝলাম 'আঈন'-এর জটিলতায় আমার ভায়রা আটকে গেল!
এ সমস্যা শুধু আমাদের না। ভারতীয় ও পাকিস্তানীদেরও।
যেমন আমার মেয়ের সাথে আরবী পড়তে যায় 'রিদা'। আমাদের মসজিদের জর্ডানী ইমাম বললেন, এইটা তো কোন নাম না, এইটা হবে (একটু টেনে, মানে মাদ্দ দিয়ে) 'রিদআ'!
আমার আরেক পাকিস্তানী প্রতিবেশীর ছেলের নাম 'সাইফান' শুনে ইমাম সাহেব সাইফানের বাপকে জিজ্ঞেস করলেন, 'ও তো একটা সাইফ। একা হয়ে দুইটা সাইফ হয়ে গেল কেমনে?'
সাইফানের বাবা কাইয়ুম বললেন, একটু ব্যতিক্রম নাম রাখতে গিয়ে এই কাজটা হয়ে গেছে। ভুলটা পরে বুঝতে পেরেছে আমাদের কাইয়ুম ভাই। 'সাইফ' মানে হল 'তরবারী' বা একটা তরবারী, 'সাইফান' মানে হল, 'দুইটা তরবারী'!
দেশী ভাই হালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলে ও মেয়ের নাম কি?
উনি বললেন, 'হাদীন' আর 'রাদীন'
বললাম, মানে?
উনি বললেন, "আল্লাহ্র 'হাদী' নামের শুদ্ধ উচ্চারণ এটা। হাদীর শেষে দুইটা 'যের' বা 'কাসরা' আছে না? এটা আসলে 'হাদীন' হবে।" রাদীনেরও ওরকম ব্যাখ্যা দিলেন।
বললাম, হুম, জব্বর জিনিস আবিষ্কার করলেন!
আমার ভারতীয় প্রতিবেশী মুজাম্মিল বলে আমরা মানে বাংলাদেশীরা নামের ভিতর নাকি 'উল', 'উর' বা 'উ -জাতীয় শব্দ' বেশী যোগ করি। আর ওরা করে 'ইল' বা 'ইর' বা 'ই-যুক্ত' শব্দ। যেমন, আমাদের 'ফারুকুর রহমান', 'মুজিবুর রহমান', 'আশরাফুল ইসলাম' ইত্যাদি। ওদের নাকি এরকম নাই। আছে 'তুজাম্মিল', 'মুজাম্মিল', 'আব্দুল কালাম' ইত্যাদি।
'আরিয়ান' নাম নিয়ে গবেষণা
হঠাৎ করে এই নামটা বেশ পপুলারিটি পেয়েছে। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। আমার এক নিকটাত্মীয়া তার ছেলের নাম রেখেছেন 'আরিয়ান'। আমার এক এক্স ভারতীয় (গুজরাটি) কলিগ যতীন মিস্ত্রী তার ছেলের নাম রেখেছে 'আরিয়ান'। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহেল ওদের দ্বিতীয় ছেলের নাম এই দুই সপ্তাহ আগেই রাখল আরিয়ান। ফেসবুকে আরিয়ানের ছবি দিতেই সোহেলের স্কুল জীবনের আরেক ক্লোজ ফ্রেন্ড আজাদ বল্ল, ওর ছেলের নামও তো 'আরিয়ান'। কি চমৎকার মিল! কেউ কারো কাছে না শুনে সবাই এমন নাম রেখে ফেলেছে। পরে জানলাম শাহরুখ খান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী গৌরী খানের ছেলের নামও নাকি 'আরিয়ান'!
আমি একটু 'গবেষণা' শুরু করে দিলাম। এই নামটা আসল কোত্থেকে? আমার আত্মীয়া বললেন, ইসলামী নামের বই থেকে পেয়েছেন। যতীন বল্ল, এটা ওদের এক 'গড'-এর নাম। সোহেল চমৎকার একটা ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড বল্ল। সেখানে যাওয়ার আগে আমাদের মসজিদের আরেক ফিলিস্তিনী ইমামের সাথে আমার কথোপকথনটা আপনাদের বলে নেই। উনি তখন কি যেন লিখছিলেন।
আমিঃ (সালাম ও অনুমতি নিয়ে) আরিয়ান কি ইসলামী নাম?
ইমামঃ না।
আমিঃ ওকে। বুঝলাম এটা কোন ইসলামী ব্যক্তিত্বের নাম না। তবে আরবীতে এই নাম আছে কি?
ইমামঃ না।
আমিঃ আপনি কি শুনেছেন এই নাম কখনো?
ইমামঃ হ্যাঁ।
আমিঃ (অনেক আশা ও আগ্রহ নিয়ে) তাহলে বলেন এইটা কোন গোছের নাম তাহলে?
ইমামঃ এইটা 'ইহুদী' নাম!
আমিঃ (ধপাশ করে পড়ে গিয়ে) মানে? ইমামঃ এইটা সেমেটিক, হিস্ট্রিক্যাল নেইম!
আমিঃ আমার পরিচিত অনেক ভাল মুসলমানই রেখেছে এই নাম।
ইমামঃ ইট্স অলরাইট।
ইমাম সাহেবের সাথে কথা শেষ করে আমার বন্ধুকে ফোন দিলাম।
- দোস্ত, কংগ্রাচুলেশন! নামটা তো বেশ রেখেছিস। তোরা কি আগেই এইটা ঠিক করে রেখেছিলি?
- হ্যাঁ। এটা অনেক খেটে-খুটে জোগাড় করারে দোস্ত।
- তা এই নামটা কোন ভাষার? কিভাবে পাইলি? মানেই বা কি?
- আরবীর। ইসলামী সাইট থেকে পাইছি। মানে হল 'সাহসী', বা 'বীর।
- ভেরী গুড। কোনো আ্যরাবিয়ান আলেমের কাছে শুনিছিলি কি? (ওর পাশের মসজিদটা হল
আরবভাষীদের দ্বারা পরিচালিত)
- না।
আমি আমার বন্ধুকে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে আমার কথোপকথনগুলো তুলে ধরলাম।
সব শুনে ও বল্ল, "না এটা ঠিক না। এটা ইহুদী নাম না। উনি হয়তো Aryan'র কথা বলেছেন, আমার ছেলের নাম Arian - এইটা মূলত পারসিয়ান নাম। আফগান আর ইরানের বর্ডারের যে প্রদেশটা আছে, ওই এলাকার লোকেরা আফগান না ফার্সী ভাষায় কথা বলে। ওখানকার এক পাহলোয়ান নাম ছিল 'আরিয়ান'।"
আমি বললাম, "ভেরী গুড। আমাদের আরিয়ানও ইসলামের পাহলোয়ান হবে ইনশাল্লাহ্।" এভাবেই কথা শেষ করে পরেরদিন আমার ইরানী কলিগ এলনাযকে আরিয়ান নামের আমার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলাম।
এলনায বল্ল, হ্যাঁ, আরিয়ান নাম ইরানে অনেক আছে।
বললাম, গ্রেট। এটা মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত নিশ্চয়ই (কারণ আমি জানি ওদের দেশে অনেক ইহুদী আছে)? বানান বলবে কি?
এলনায বল্ল, "নট নেসেসারিলি। অমুসলিমদের মধ্যেই মূলত এ নামের প্রচলনই বেশী। বানান হল, Arian।"
আমি আমার বন্ধুকে এ ব্যাপারে আর কিছুই বললাম না।
(চলবে)
____________________________________________
মূল লিঙ্কঃ http://sonarbangladesh.com/blog/shahin/75985
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন