২৯ মার্চ, ২০১২

মাচু পিঁচু

388243_10151150291740497_608590496_22718649_884191442_n
আগুয়াস ক্যালিয়ান্তেসের তারা জ্বলা আকাশের নিচে চুটিয়ে আড্ডা মেরে ফুরফুরে মেজাজে নিদ্রাদেবীর কোলে নিজেকে সমর্পণ করে ছিলাম, খুশী হব নাই বা কেন- একে তো আড্ডার সঙ্গী আর পানীয়ের খানিকটা ব্যাপার আছে, তার চেয়েও ট্রিলিয়নগুণ আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে পেরুর আন্দেজের কোলের এই ছোট শহরটিই বিশ্বের বিস্ময় ইনকা সভ্যতার পাহাড়ি শহর মাচু পিঁচু যাবার পথে শেষ সভ্যতার ছোঁয়া লাগা জনপদ, এরপর বাসে চেপে বা পদব্রজে সোজা সেই পাহাড় শীর্ষে অবস্থিত শহরে গমন।
কবে থেকে শুরু হয়ে মাচু পিঁচুর সাথে এই সখ্য, সাল মনে পড়ে না কিন্তু পড়ি তখন প্রাইমারী স্কুলে, বড়দের অদ্ভুতুড়ে জগতের মায়াবী আকর্ষণ নিয়ে হাতছানি দিত কিছু আজব জিনিস, তার মধ্য একটি ছিল রহস্য পত্রিকা নামের এক আজব পত্রিকা, সেবা প্রকাশনীর মাসিক মুখপাত্র। সেটির মলাটে ছিল এক বিশ্রামরত বাঘের ছবি, সেই সাথে লেখক শওকত হোসেনের সাক্ষাৎকারের কথা। ভিতরের এক লেখাতে ছিল বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার না-পাওয়া গুপ্তধনের ফোলানো-ফাঁপানো বর্ণনা, সেখানে ছিল এক ভাঙ্গাচোরা শহরের সাদা কালো ছবি, নিচে লেখা- মাচু পিঁচু।
কেমন অদ্ভুত একটা ছন্দময় মজার নাম- মাচু পিঁচু, সেই প্রথম নামটির সাথে পরিচয়, এর পরে কত পত্রিকা, বই, তথ্যচিত্র, চলচিত্রে ( সত্যজিৎ রায়ের আগন্তকসহ) এর নাম শুনেছি তার লেখাজোখা নেই। এর মোহনীয় আকর্ষণে জড়িয়ে যাবার পর থেকেই স্বপ্ন দেখেছি একদিন, কোন এক দিন আন্দেজের পাহাড়ি এই শহরে যেতেই হবে আমাকে।
403577_10151238952950497_608590496_23023864_421166918_n
সেই লম্বা যাত্রা শেষ হয়েছিল গতকাল সন্ধ্যেয় আগুয়াস ক্যালিয়ান্তসের রেল ষ্টেশনে। কোন মতে সুপার ট্রাম্প হোস্টেলে মাথা গুজে পরের দিন ভোরে হিরাম বিংহ্যাম সড়ক ধরে মাচু পিঁচুর পথে আরোহণ চলবে এমনটাই ছিল পাকা পরিকল্পনা, সেই মোতাবেক স্থানীয় ইনকা গাইড এসে সব বুঝিয়ে দিয়ে গেল, সেই সাথে জানাল মাচু পিঁচুর পাশের সুউচ্চ শৃঙ্গ হুয়ানাপিচুতে তারা আরোহণের অনুমতি জোগাড় করে দেবে, কারণ হুয়ানা পিঁচুতে প্রতিদিন মাত্র ২৫০ জন পর্যটক প্রবেশ করতে পারে, যেখানে মাচু পিঁচুতে ৪০০০ জন, আর সেইখান থেকেই এক চিলতে স্বর্গের মতই মেঘের অপার্থিব রাজ্যে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায় মাচু পিঁচুকে। শুধু শর্ত একটাই, পরদিন কাক- চিল- শকুন ওঠার আগেই আমাদের উঠে পৌঁছাতে হবে মাচু পিঁচুর মূল ফটকে।
ভোর ৫ টায় অ্যালার্ম দেয়াই ছিল , কিন্তু বৃষ্টিপাতের প্রবল অস্তিত্ব জানান দেয়া উৎপাতে তার অনেক আগেই ঘুম ঠেলে সেই জায়গা দখল করে নিল উৎকণ্ঠা আর তার চিরসঙ্গী অধীর অপেক্ষা। এক সময় বাস ছেড়ে যাবার সময় হয়ে গেল, চলে গেল গাইডকে দিয়ে রাখা সময়টুকু, ঘড়ির কাঁটা ৫টা থেকে ৯টা পেরিয়ে গেল, কিন্তু আকাশের কান্নার বিরাম নেই, মনে হচ্ছে আদি গোষ্ঠীদের মত আমাদেরও সূর্যদেবতাকে যোগ তপস্যা বলে মেঘের আড়াল থেকে সামনে আনার জন্য যজ্ঞে বসতে হবে।
এমনিতে হয়ত খারাপ লাগত না, হোস্টেলের বারান্দা দিয়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের মিতালি এই ধূসর সকালেও অপূর্ব লাগছে, একটা আলসে দিন এইভাবে গড়িয়ে গেলে এমন কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু বিকেলে মাচু পিঁচুর ট্রেনে ফিরতে হবে, টিকিটের পুরো টাকা অগ্রিম দেওয়াতো আছেই, পরের সীট আবার কবে ফাঁকা পাওয়া যাবে কেউই বলতে পারে না, তাই এত কাছে এসে এমন আবহাওয়া মানে জগতের শ্রেষ্ঠ পরিহাস- মাচু পিঁচুর নিচে এসে দর্শন না পেয়ে ফেরত যাওয়া!
ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে যেতে কোন আপত্তি নেই, সমস্যা হচ্ছে ক্যামেরা ( স্থির ও ভিডিও) নিয়ে, ওদের ছাড়াই বা যায় কি করে! তবে সেরকম অবস্থা হলে সব ছাড়াই( এমনকি পরনের বস্ত্র) যেতে রাজী আছি, তিন বন্ধু মিলে বেশ খানিকক্ষণ ঝিমানো আড্ডা মেরে, এন্তার কোকা চা আর কফি ধ্বংস করে মোড়ের দোকানে থেকে সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিকের পনচো কিনে তাতেই কোনমতে ক্যামেরা সহ শরীর ঢেকে রওনা হয়ে গেলাম, জলবর্শার দলের তীব্রতা তখন অনেকটা কমে এসেছে।
398069_10151196436910497_608590496_22877126_975025360_n
একরত্তি শহরটার সাথেই বাসষ্টেশন, মিনিট পনের পরপরই বাস ছাড়ছে মাচু পিঁচুর উদ্দেশ্যে, হিরাম বিংহাম সড়ক দিয়ে একিয়ে বেঁকিয়ে চলেছে পাহাড় শীর্ষে, অনেকেই হাইকিং করে উঠে অবশ্য আবহাওয়া ভাল থাকলে, বেশী রোমাঞ্চপ্রিয়রা সাইকেলে!
394772_10151150968370497_608590496_22721783_1793478652_n
মিনিট বিশেকের যাত্রা, জলভরা পোয়াতী মেঘদের বেয়াদবিতে পথের খুব একটা ঠাহর করবার আগেই গন্তব্য চলে আসল- এখন আধুনিক সভ্যতাকে বিদায় জানিয়ে আমাদের প্রবেশ ইনকাভুবনে।
429483_10151321107790497_608590496_23249835_1843372971_n
যারা আলোকচিত্রের ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহী তারা আগে ছবিগুলো আরেকবার দেখে নিতে পারেন এই খানে !
মাচু পিঁচু নিয়ে তো সারা বিশ্বই মেতে আছে আর পুনরাবিষ্কারের পর থেকে, এর ইতিহাস নিয়ে এত কচকচির আলাদা ভাবে কিছু নেয়, কিন্তু বলুন তো মাচু পিঁচুর সবচেয়ে বড় রহস্যটা এখন পর্যন্ত কি? ভাবতে থাকুন, উত্তর মিলবে লেখার মধ্যেই।
401144_10151344741730497_608590496_23333449_1766050144_n
সাগর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০০ ফিট উপরে অবস্থিত এই ইনকা শহরটি নির্মিত হয় ১৪৫০ সালে, সম্ভবত ইনকা সম্রাট পাচাকুটির নির্দেশে, কিন্তু এর মাত্র একশ বছর পরেই শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়, কেন তা আমাদের জানা নেয়, হয়ত কোন রোগের মহামারী আকারে প্রকোপের ফলে।
মূল ফটকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে গাইডের দেখা মিলল না, বেচারির দোষ দিয়ে লাভ নেই- এমন আবহাওয়ায় কে এত ঘণ্টা বৃথা অপেক্ষা করবে! কিন্তু এর ফলে আমাদের হুয়ানা পিঁচুতে দাড়িয়ে মাচু পিঁচুর চমৎকার দৃশ্য দেখার এবং ছবি তোলার সম্ভাবনা এযাত্রায় থেমে গেল।
428720_10151265967700497_608590496_23107976_867280603_n
সেখানকার টিকেট চেকিং ব্যবস্থা বেশ কড়া, দিনে যেহেতু মাত্র হাজার চারেক দর্শনার্থী যেতে পারে তাই একেবারে নাম ডেকে ডেকে ঢোকাল! এরপরে পাথরের তৈরি রাস্তা, ইনকাদের আমলেরই, হয়ত এখানে একসময় পায়চারী করতেন ইনকা সম্রাট, শ্রমজীবী কৃষকেরা, সেই সাথে বহু শতাব্দী পরের অভিযাত্রীদের দল। এক জায়গায় মাচু পিঁচু আবিস্কারের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ধাতব ফলক বসানো ( এখন অবশ্য শত বর্ষ পূর্তি হয়েছে), আরেকটাতে হিরাম বিংহামের নাম বসানো সেই সাথে লেখা ১৯১১ সালে তার এই বিস্ময়শহরে পদার্পণের কথা।
422852_10151231149935497_608590496_22994447_1880046822_n
আমেরিকার ইয়েল বিশ্ব-বিদ্যালয়ের এই তরুণ অভিযাত্রী শিক্ষককে অনেকে মাচু পিঁচু পুনরাবিষ্কারের জন্য সবটুকুই কৃতিত্ব দেয় যা মোটেও তার প্রাপ্ত নয়, প্রথম কথা হিরাম খুঁজছিলেন ভিলকাবাম্বা নামে ইনকাদের পাহাড়ি রাজধানী, সেটি তিনি পেয়েও যান, কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাবে সেটির তাৎপর্য বুঝতে পারেন নি, বরং অভিযান চালাতে চালাতে মাচু পিঁচু এসে উপস্থিত হবার পর ভাবেন এটিই ভিলকাবাম্বা! পরবর্তীতে অবশ্য তার ভুল ধারণার অবসান ঘটে।
424370_10151265967440497_608590496_23107975_172813521_n
সেই সাথে এই কথা দৃঢ় ভাবে বলা যায় হিরাম-ই এর একমাত্র আবিস্কারক নন, স্থানীয়রা অনেকেই এই ইনকানগরীর কথা জানত, এমনকি হয়ত মাঝে মাঝেই তীর্থযাত্রার মত সেখানে গমনও করত, কিন্তু আবিস্কারক হিসেবে তার স্থানীয় গাইডদের বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব না দিয়ে সম্পূর্ণ সাফল্যের ভাগিদার হিসেবে তার নামই বলা হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত হিরাম যে একজন নিষ্ঠ গবেষক ছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি, তিনি খানিকটা স্টান্টবাজির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের চেষ্টাতেই বিভোর ছিলেন, এবং মাচু পিঁচু থেকে পাওয়া অগণিত ইনকা কীর্তি অনৈতিক ভাবে গবেষণার কথা বলে আমেরিকায় নিয়ে যান, যা নীতিগত ভাবে অত্যন্ত অন্যায়, যদিও এই বছর ইয়েল বিশ্ব বিদ্যালয় প্রায় ৫০০০ নিদর্শন পেরুর কাছে ফেরত দিবে বলে জানিয়েছে।
হিরাম বিংহাম তার জায়গায় থাক, আমরা এগিয়ে চলি অপূর্ব ভাবে পাথর বাঁধাই করা সেই রাস্তা ধরে, সামনে পিছনে মানুষের মিছিল আর স্বর্গ থেকে তো বৃষ্টি ঝরে পড়ছেই। বেশ কিছু গলি ঘুপচি পেরিয়ে ছাউনি দেয়া তিনটি চালাঘরের দর্শন মিলল, যাদের দেয়ালগুলো খোদ ইনকাদেরই নির্মিত, কিন্তু খড়ের চালা আধুনিক কালে তৈরি, কেবলমাত্র দর্শনার্থীদের একটা ধারণা দেবার জন্য যে কেমন ছিল সেই সময়ের ঘরগুলো।
400803_10151151095815497_608590496_22722204_51414982_n
কারণ, কয়েক শতাব্দী পরিত্যক্ত থাকার ফলে পচনশীল বস্তুর স্থাপনার কোন অবশিষ্টাংশ ছিল না মাচু পিঁচুতে। তাই আগের ইতিহাস ফিরিয়ে নিয়ে আসার কিছু বৃথা চেষ্টা মাত্র। সেই সাথে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটিকে আগের অবস্থায় কিছুটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে গত একশ বছর ধরেই।
এমন ঘরগুলো মূলত ব্যবহার হত খাদ্যশস্যের গুদাম হিসেবে, কেবল কিছু ঘরে মানুষের আবাস ছিল। এদের পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই আক্কেল গুড়ুম করে চোখে পড়ল লামা ! ল্যাতিন আমেরিকার উট জাতীয় এই প্রাণী মনে হয় সারা বিশ্বের কাছে অতি পরিচিত তার মাংস, পশম, পাহাড়ে চড়ার নেশা এবং ইনকা সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য ( আলপাকা এবং ভ্যিকুনা নামের আরও দুই প্রজাতি উট আছে সেখানে, এর মধ্যে আলপাকার পশম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং দামী)।
417027_10151300477440497_608590496_23200429_1223139355_n
মনের সুখে সে চরতে চরতে সবুজ লকলকে ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে প্রাচীন সেই চারণভূমিতে, তার দর্শন একটু নিকট থেকে পাবার জন্যই আরো কয়েক ধাপ সিঁড়ি টপকিয়ে ফাঁকা মত জায়গাটিতে যেতেই লামার ছবি আর তোলা হলে, অবাক বিস্ময়ে বোবা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম নিচের দিকে, যেখানে কুয়াশা-মেঘের অবগুণ্ঠন খুলে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য বইয়ের মলাটে দেখা একটি ছবি-
399872_10151290082580497_608590496_23169241_1590129866_n
স্বপ্নের মাচু পিঁচু, সাথেই সাথেই মনে কড়া রোদে ঝকঝকে আকাশের নিচের মাচু পিঁচুকে হয়ত দেখতে ভালই লাগত, কিন্তু এর পরিপূর্ণতা যেন এমন রহস্যঘন পরিবেশে আধা উম্মুক্ত আধা দৃশ্যমান অবস্থাতেই। চারপাশে আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়, অনেক নিচে খরস্রোতা উরুবামবা নদী, আর মেঘে ঘেরা মাচু পিঁচু, শিল্পীর আঁকা পটের ছবির মত, কেবল আকাশে উড্ডায়মান গোটাদুয়েক কনডর শকুন বাদ গেছে!
431755_10151231150320497_608590496_22994450_1318972425_n
যে কারণে এত শাপশাপান্ত করে আসা মেঘ আর তার নিক্ষেপিত সন্তান বৃষ্টিকে খানিকটে ধন্যবাদই দিলাম এমন মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। কিন্তু সেই সাথে সময়ের স্বল্পতা হেতু চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরতে থাকলাম প্রাচীন সেই নগরীর রাস্তায়, ময়দানে, শস্যক্ষেত্রে, ভাঁড়ার ঘরে, উদ্যানে, সূর্য মন্দিরে।
423310_10151238953045497_608590496_23023866_1982305124_n
পাথরের উপর পাথর মাপমত সাজিয়ে বসিয়ে কি চমৎকার দেয়ালের মাঝে টেকসই জানাল আর দরজা বানিয়ে নিয়েছিল তারা,
423204_10151265967170497_608590496_23107974_2027158237_n
423421_10151417303450497_608590496_23611260_1568061357_n
এক জায়গায় স্থানীয় বেশ কিছু গাছের সমাহার দেখা গেল,
421186_10151270462225497_608590496_23119652_616835945_n
আবার সেইখানেই দেখা মিলল কিছু পালকময় বন্ধুর, যার মাঝে ছিল একমাত্র পেরুরই বাসিন্দা বিশেষ প্রজাতির হামিংবার্ড।
409034_10151270462005497_608590496_23119651_1643440834_n
427333_10151270461810497_608590496_23119650_1267574428_n
আধা বৃত্তের মত সূর্য মন্দির, অনেক ইতিহাসবিদই মনে করে থাকেন মাচু পিঁচু অত্যন্ত পবিত্র স্থান ছিল ইনকাদের কাছে, এবং এর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই হয়ত তারা এইখানে পাহাড়ি শহরটি নির্বাচন করেছিল, স্থাপন করেছিল উপাসনালয়।
399794_10151294989915497_608590496_23186099_887056208_n
সেই সাথে জল সেচের মাধ্যমে এই বন্ধুর ভূমিকেই তারা উর্বর করে তোলে, শস্যক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট ফসলের উৎপাদনের মাধ্যমে হয়ে ওঠে স্বয়ংসম্পূর্ণ তেমনি পশুপালনের মাধ্যমেও হয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ওঠে মাংস এবং পশমের জোগাড়।
বিশাল শহরটির সর্বত্রই যেন ইতিহাসের জাদু মাখানো, অবাক লাগে, ভাল লাগে, আপ্লুত হয় বিস্ময়ে, মুগ্ধতায়, সেই সাথে বারিধারায়! একবার তো সদলবলে সূর্য বন্দনাও করা হল মেঘমুক্ততার জন্য,
422487_10151373655645497_608590496_23444210_1970137523_n
কিন্তু বিধি বাম, তাই বৃষ্টিস্নাত মাচু পিঁচুর অভিজ্ঞতা নিয়েই ট্রেন ধরার জন্য শুরু হল আমাদের দৌড় !
529148_10151439575050497_608590496_23701857_29861822_n
ও আচ্ছা, বলেছিলাম মাচু পিঁচুর সবচেয়ে বড় রহস্যের কথা, যা আমাদের কাছে আজও অজানা, সেটি হচ্ছে, আমরা যেন কোন শহর নিয়ে কথা বলছিলাম? কেন, মাচু পিঁচু ! আরে, সে তো আমাদের দেওয়া নাম, এর আসল নাম কি মানে ইনকারা শহরটিকে কি নাম ডাকত? উত্তর- আমাদের অজানা আজও !!!

সুত্রঃhttp://www.sachalayatan.com/tareqanu/43872
বিস্তারিত পড়ুন ... »

পল্টন, বই কেনা আর আমার মার্ক টোয়েন হবার গল্প

ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয় শখ গুলোর একটা হলো বই পড়া। তাই বলে আমাকে জ্ঞানের সমুদ্র ভাবলে ভুল হবে। আমার আগ্রহ ছিলো সব রকমের গল্পের বইতে। তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, টেনিদা, কাকাবাবু, টিনটিন এমনকি চাচা চৌধুরী পর্যন্ত। দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটতো তাই ফেলুদা তোপসের সাথে মগনলালের পিছনে তাড়া করে, না হলে কিশোর পাশার সাথে গোলমেলে ঘড়ির রহস্য ভেদ করে। বই পড়ার পাশাপাশি আর একটা শখ ছিলো, সেটা হলো বই জমানো। স্কুলে পড়ি, এতো বই কেনার টাকা কই পাবো? তাই একমাত্র সম্বল ছিলো পুরোনো বই কেনা। ঢাকার পুরানা পল্টন, নীলক্ষেত আর সদরঘাটে পুরোনো বই পাওয়া যায়। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কিংবা রিক্সাভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে তাই প্রতি সপ্তাহে চলে যেতাম এসব জায়গায়। পুরনা পল্টনটা বাসার কাছে হওয়াতে এখানটাতেই বেশী যাওয়া হতো।

একবারের কথা বলি। তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। বেশ কিছু টাকা জমিয়েছি। আমাদের বাসা তখন ফকিরেপুল এলাকায়। অসহযোগ আন্দোলন চলছে। বিএনপি বিরোধী দল ছাড়াই একা নির্বাচন করে সংসদে বসেছে। আর বিরোধী দল সব এক হয়ে জ্বালাও পোড়াও করছে। দৈনিক বাংলায় প্রতিদিন টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছে আর আমরা বাসায় বসে হাঁপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে টিভি দেখছি। কারন স্কুল কলেজ সব বন্ধ। এর মাঝে একদিন মনে হলো সব কিছু শান্ত। মিছিল টিছিল নাই। তাই জমানো টাকা নিয়ে রওনা হলাম পুরনা পল্টনের বইয়ের ডিপোতে। আমার সাথে সবসময়ই কোন না কোন বন্ধু জুটে যেতো। সব ক্লাশেই আমার সাথে চলার জন্য একজন খুব ভালো বন্ধু থাকতো। ক্লাশ এইটে ছিলো তারেক। আমি বাসা থেকে বের হয়ে তারেককে নিয়ে হেটে চলে এলাম পুরনা পল্টনে। এই বই দেখি সেই বই দেখি। খুব হিসাব করে কয়েকটা বই কিনলাম। সব মিলিয়ে জমিয়েছি পঞ্চাশ টাকা। দরাদরি করে পাঁচটার মতো বই পাওয়া যাবে। তাই খুব হিসাব করে কিনতে হবে।
বই খুঁজতে খুঁজতে তোপখানার মোড় পর্যন্ত চলে এসেছি। খুব কাছ দিয়ে কয়েকটা মিছিল গেলো। খালেদার চামড়া তুলে নেবো আমরা টাইপের শ্লোগান দিতে দিতে।তখন সব মিছিলেরই এটা একটা কমন শ্লোগান।খালেদা আর হাসিনার চামড়ার গুনগত মান মনে হয় খুব ভালো। কেননা সব সময় দেখি এদের চামড়া তোলার জন্য সবাই খুব উৎসুক থাকে।যদিও সেই চামড়া তোলার পর সেটা দিয়ে ঠিক কি করা হবে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয় না।
মিছিল খুব একটা স্বাভবিক ব্যাপার তখন। তোপখানার কাছাকাছি একটা দোকানে পৌছানোর পর দেখি একটা হুড়াহুড়ি লাগলো। দোকানদার চিৎকার করে বললো ভাইজান ভাগেন। আমি কিছুই বুঝলাম না। পায়ের কাছে সিলিন্ডার টাইপ কিছু একটা এসে পড়লো। সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি পেছন ফিরে দিলাম দৌড়। আশে পাশে সবাই দেখলাম দৌড়ুচ্ছে। তারেক খুব লম্বা। সে দৌড়ে আমাকে ছাড়িয়ে গেলো। রাস্তার উপর বই পত্র সব ছড়াছড়ি। তরমুজের কিছু দোকান ছিলো। সব লন্ড ভন্ড। রাস্তা ভর্তি তরমুজ পড়ে আছে। পেছনে গুলির শব্দ। আমি তখনো দৌড়াচ্ছি। কোন পথ থেকে কোন পথে গেছি জানি না। এক সময় দেখলাম আমি মতিঝিল পৌঁছে গেছি। আশে পাশে কোথাও তারেককে খুঁজে পেলাম না। পড়ে অবশ্য জেনেছিলাম সে একটা দোকানে মধ্যে লুকিয়ে ছিলো। আর আমি মতিঝিলের মোড়ে টেনিদা সমগ্র নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। সেদিনের পর পুরো ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিলো অনির্দিষ্ট দিনের জন্য। তাতে আমার কি? আমি ঘরে বসে তখন আয়েস করে টেনিদা সমগ্র পড়ছি।
পুরনা পল্টন নিয়ে আর একটা ঘটনা বলি। ক্লাশের বই পড়ার ব্যাপারে আমার বরাবরই অনিচ্ছা। তবে পাঠ্যবইয়ের একটা লাইন খুবই মনে ধরলো। বই চুরি করা নাকি ঠিক চুরি করা নয়। মার্ক টোয়েন নামে এক বিশাল বড় মানুষ সেটা বলে গিয়েছেন। এই লাইনটা পড়ে আমার মাথায় ঢুকলো, তাহলে তো আমি বই চুরি করলে কোন সমস্যা নাই। আমি তো চাইলেই পুরনা পল্টন থেকে একটা দুইটা বই গাপ করে দিতে পারি। যেই বুদ্ধি সেই কাজ। তখন ক্লাশ নাইনে পড়ি। আমার সাথে সবসময় থাকে মাসুম। তো আমি মাসুমকে নিয়ে একদফা পুরনা পল্টন ঘুরে এলাম। আর চুরি করে নিয়ে নিয়ে এলাম তিনটা বই। বন্ধু মহলে তখন আমরা পুরা হিরো।
একবার চুরি করে সাহস বেড়ে গেলো। দু’দিন পর আবার গেলাম। এবার আরো বেশী বেপরোয়া। একটা বই কিনি তো তিনটা চুরি করি।
কিছু বই মাসুমের হাতে চালান করে দিয়ে আমি মাত্র টিনটিনের একটা বই নিজের কেনা বইয়ের ফাঁকে চালান করতে যাবো এমন সময় পাশের দোকানী ছুটে এলো। কাহিনী হলো, পাশের দোকান থেকে মাত্র ফেলুদার যত কান্ড কাঠমুন্ডুতে বইটা চুরি করে মাসুমকে দিয়েছে আর সে সেটা একদম বাইরে রেখে ঐ দোকানীর সামনেই দাড়িয়ে আছে। দোকানী তো বিশাল চিৎকার চেচামেচি জুড়ে দিলো। আমরা নাকি তার স্টল থেকে বই চুরি করেছি। কাহিনী তো সত্যই। এখন কি করি। আশে পাশে লোক জমে গেলো। আমি গলা উচিয়ে বলা শুরু করলাম ‘মোটেও না। আমি এই বই চাচামিয়ার কাছে থেকে কিনেছি।‘
ঐখানে এক চাচা মিয়া ছিলো। তার কাছ থেকে আমি অনেক বই কিনতাম। তাই বলে দিলাম তার নাম। দোকানী তো বিশ্বাসই করে না। বললো, ‘চলেন তাইলে চাচা মিয়ার কাছে।‘ আমার হাত ধরে টেনে সে চাচামিয়ার দোকানে নিয়ে গেলো। আমার কপাল এমনই খারাপ যে সেই দিন চাচা মিয়া দোকানই খুলে নি। ব্যাস পুরা হাতে নাতে ধরা।
আমার একটা সমস্যা হলো বিপদে পড়লে মাথা গরম হয়ে যায়। আর চিৎকার শুরু করি। আমি তখন বললাম আমি এই বই নীলক্ষেত থেকে কিনে এনেছি। দোকানীরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। তোপখানার মোড়ে মোটামুটি একটা বিশাল ভিড় লেগে গেলো। আমি আঁড় চোখে দেখলাম তিনজন পুলিশ আসছে। মাসুমের দেখলাম মুখ টুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে। আমি জোড় চিৎকার করা শুরু করলাম। এই দোকানী একটা পুরান বই আমাকে গছাতে চেয়েছিলো । আমি নেই নি বলে সে আমার নামে মিথ্যা বলছে। এই কাহিনী বানালাম। যদিও কাহিনীটা নিজের কাছেই রুপকথার গল্প মনে হলো।
এর মাঝে ভীড়ের মধ্যে এক কম বয়সী দেখলাম আমার পক্ষ নিলো। মনে হয় ইউনিভার্সিটিতি পড়ে। সেও বলতে শুরু করলো । ‘আসলেই এই সব দোকানদারদের কোন নীতি নাই। এরা ছোট ছোট পোলাপারনদের কাছে বেশী দামে বই বেঁচে।‘ ইত্যাদি ইত্যাদী। আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম।আমার চিৎকার আরো বেড়ে গেলো। এই দোকানী আগে কোনদিন আমাকে ঠকিয়েছে, আগে কোনদিন আমোকে ছেড়া বই দিয়েছে সব ফিরিস্তি শুরু করলাম উৎসাহ পেয়ে। ভীড়ের মাঝে দেখলাম জনমতও আমার পক্ষে আসছে। অবশেষে সবাই মিলে দোকানদারকে খুব বকাঝকা করলো। আমার তখন খারাপ লাগা শুরু হলো। কিন্তু তখন আর কিই ই বা করতে পারি। ডজন খানেক চুরি করা বই আর মনের মাঝে তীব্র অপরাধ বোধ নিয়ে ফিরে এলাম ঘরে।
এরপর যতবারই পল্টনের ঐ জায়গাটা দিয়ে গেছি মাথা সেই দোকানদার কে খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। যদি কোনদিন পাই অবশ্যই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো। হোক না দশ টাকার বই। হোক না তখন আমি ছোট মানুষ।কিন্তু আমি তারকাছে দশ হাজারগুণ ছোট হয়ে গেছি মানুষ হিসেবে। মার্ক টোয়েনের কথা মনে হয় সবসময় সত্যি নয়।
বিস্তারিত পড়ুন ... »

ফাতু-হিভা , আমার প্রিয় বই

ফাতু-হিভা, আমাদের গ্রহের স্বর্গ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে, আর সব দেশ-মহাদেশের বাঁধন ছিন্ন করে অতল নীল মহাসাগরের বুকে ফুঁড়ে ওঠা চির সবুজে ছাওয়া পাথর-মাটি মেশানো কয়েকটি একরত্তি দ্বীপের সমাহার। পলিনেশিয়ায় অবস্থিত, তাহিতির খুব কাছের মারেক্কস দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ত্রিভুবনের অমরাবতী।
নরওয়ের পাঁশুটে শহরজীবনের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে এক সোনালীচুলো যুবক ঠিক করল সারা জীবনের জন্য চলে যাবে এই শহর আর কৃত্রিম সভ্যতা ছেড়ে, ফিরে যাবে প্রকৃতির কোলে, যেখানে সময় অফুরন্ত, নেই অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য নগ্ন হাহাকারময় চাহিদা, জীবন যাপনের অত্যাবশ্যকীয় আহার, পানীয়ের নুন্যতম সংস্থান হলেই খুশী থাকে সবাই। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বজ্রের দেবতা থরের নামে নাম এই যুবকের থর হেয়ারডাল। অনেক হিসাব নিকাশ কষে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দিলেন এই স্বর্গ পানে, কোন দিন লোকসমাজে না ফেরার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। তাকে নিয়ে অবশ্য একটি লেখা লিখেছিলাম সচলে আগে।
সারা বিশ্ব পরবর্তীতে থর হেয়ারডালকে চিনেছে প্রাতঃস্মরণীয় অভিযাত্রী, নৃতত্ত্ববিদ, লেখক হিসেবে। কন-টিকি, রা, ইউফ্রেতিস প্রমুখ দুঃসাহসী অভিযানের দলনেতা হিসেবে। কোটি কোটি মানুষের ধারণা ভুল প্রমানিত করে স্রেফ বালসা কাঠের তৈরি ভেলায় আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই পাড়ি দিলেন প্রশান্ত মহাসাগরের বিপুল বিক্ষুদ্ধ জলরাশি, প্রমাণ করার চেষ্টা চালালেন আদি রেড ইন্ডিয়ানরা অনেক আগেই ল্যাতিন আমেরিকা থেকে একই ভাবে ভেলার মাধ্যমে যেয়ে বসতি গেড়েছিল পলিনেশিয়ায়। একই চেতনায় নলখাগড়া দিয়ে নৌকা বানিয়ে পাড়ি দিলেন আটলান্টিক মহাসাগর, দেখাতে চাইলেন প্রাচীন মিশরীয় ও মায়া সভ্যতার মধ্যকার মেলবন্ধন কিন্তু ফাতু-হিভা ছিল তার প্রথম যাত্রা- নিজের সন্ধানে, জ্ঞানের জিগীষায়, প্রকৃতির খোঁজে।
১৯৩৮ সালে নরওয়েজিয়ান ভাষায় প্রকাশিত হয় ফাতু-হিভা, ২য় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়বার আগেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় এই মহান আলেখ্য, অনেক অনেক দশক পরে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তা ইংরেজিতে। ব্যস, ভিনি, ভিডি, ভিসি- কোটি কোটি পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসল তার সেই স্মৃতিচারণা।
থরের ঝুলিতে ছিল মুক্তোঝরা ভাষা, অভিজ্ঞ ডুবুরীর মত মনের শব্দ ভাণ্ডারের অতলে ডুব দিয়ে অনায়াসে নানা মূল্যবান শব্দ সম্ভার তুলে এনে শিল্পীর অপরিসীম দক্ষতায় ছুঁয়ে ছেনে পরিমাপমত একের পর এক স্বচ্ছ দ্যুতিশীল মায়াময় শব্দ বসিয়ে নির্মাণ করেছেন কল্পলোকের সাহিত্যদুর্গ। সেই অবারিত দ্বিধাহীন পথ বেয়ে আমিও চলে গিয়েছি অজস্রবার স্বপ্নের দ্বীপপুঞ্জে, যেখানে সবুজ নারকেল পাতার চিরল বাতাসে কেপে ওঠে ভোরের মৃদু আলো, দিগন্তে আকাশ আর সাগরের মিলনস্থানে কেবলই মন ভুলানো নীলের সহাবস্থান, দীঘল ঘাসের বনে সরসর করে ছুটে যায় মুক্ত হাওয়া, গতিতে তার বুনো ঘোড়ার উদ্যমের প্রাচুর্য, নিশিরাতে নিশাচর পাখির শব্দ ছাড়া সমস্ত বিশ্ব চরাচর নিস্তব্ধ, আকাশগঙ্গার অনন্ত নক্ষত্র বীথি নেমে আসে আমার মাথায় চাঁদোয়া খাটিয়ে দিতে প্রতিদিন সেই দূষণমুক্ত আকাশে।
তার শব্দ বিন্যাস আর রচনাগুণে নিশিগ্রস্ত মানুষের মত আমি ভিড়ে যাই থর আর তার স্ত্রী লিভের দলে, সমস্ত ধরনের কোলাহল থেকে যোজন যোজন দূরে এসে প্রথম সন্ধ্যায় তাবু খাটায় তারা, নক্ষত্রের আগুনে আলোকিত নিবিড় শান্তিময় মধ্যরাতে হঠাৎ কামানের গোলা পতনের শব্দে হতচকিত করে তোলে সবাইকে, সন্ধান করে পাওয়া যায় ঝড়ো বাতাসে উপর থেকে খসে পড়েছে ঝুনো নারকেল! নিরীহ দর্শন নারকেলগুচ্ছকে এমন মৃত্যুদূতের ভূমিকায় দেখে নিরাপদ স্থানে তাঁবু সরিয়ে ফেলে তারা, প্রথমবারের মত বিপদের সম্মুখীন হয়ে সেই পুরনো বাণী উদয় হয় তাদের চিন্তা মাঝে- স্বর্গেও সাপ আছে!!
আদিম জীবনে ফিরে যাবার প্রানান্তকর চেষ্টা চালায় তরুণ দম্পতি, লজ্জা নিবারণের যৎসামান্য আবরণ ধারণ করেই ক্ষুন্নিবৃত্তি মেটাবার তাগিদে ফল আহরণ ও মাছ শিকারে সচেষ্ট হয় তারা, রূপকথার আদম- ইভের মত। কিন্তু স্বর্গে একা নয় তারা, আছে স্থানীয় আদিবাসীরা, যারা দেখাতে লাগল মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহ এই পাগলাটে শ্বেতকায়দের ব্যাপারে, নিরিবিলি স্বেচ্ছা নির্বাসনের মূল ধারণাই ভেস্তে যায় বুঝি!
ক্রান্তীয় জঙ্গলের গভীরে কুঁড়ে বানালেন বাঁশ কেটে, ঘর ছাইলেন পাতা দিয়ে, শুরু হল অন্য ধরনের সংসার জীবন। উৎপাত হিসেবে চলতে থাকল পাগল করা জীবাণু পরিবহনকারী মশার কামড়, প্রতিকূল আবহাওয়া, অন্যান্য রোগের সংক্রমণ। সেই সাথে স্থানীয়দের অসহযোগিতা।
অবশেষে কুঁড়ে ছেড়ে অন্য দ্বীপে যেয়ে তারা পাথরের গুহার আশ্রয় নেন। একইসাথে নানা দ্বীপের আদিবাসীদের সংশ্রবে এসে তাদের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণার আগ্রহ জন্ম নেয় থরের মনে, সেখানে প্রাপ্ত প্রাচীন মাথার খুলি ও লোকগাথায় ল্যাতিন আমেরিকার সাথে অদ্ভুত সাদৃশ্য খুঁজে পান তিনি, বিশাল সব নির্বাক প্রস্তর মূর্তি দেখে মাথার ভেতরে প্রশ্ন ফেনিয়ে ওঠে তাহলে কি প্রচলিতমতের পূর্ব এশিয়া নয়, দক্ষিণ আমেরিকাই এই দ্বীপবাসীদের আদি বাসস্থান।
সেখানে দেড় বছরের অবস্থানের এক ফাঁকে স্বপ্নদ্বীপ তাহিতি গিয়েছিলেন তিনি, মালিক বনেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রাইফেলের, কারণ সেই রাইফেলের কাঠের কুঁদোতে যে রঙচঙে ছবি আঁকা ছিল তা এঁকেছিলেন স্বয়ং পল গগ্যাঁ! ইম্প্রেশনিজমের দিকপাল এই ফরাসী চিত্রকর তার জীবনের সেরা কাজগুলো সবই করেছিলেন আলো ঝলমলে তাহিতিতে, তার সমাধিও এইখানে অবস্থিত। পরে এক বেরসিক কাস্টমস কর্মকর্তা নিরাপত্তার দোহাই দেখিয়ে রাইফেলের কুঁদোটি খুলে নেয়, লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় সেই বিশ্ব সম্পদ।
এমন ভাবে আরব্যপন্যাসের জাদুকরের মত বইয়ের খসখসে পাতায় নির্বাক পিঁপড়ার সারির মত কালো কালো অক্ষরগুলো থেকে লাল-নীল-সবুজ বর্ণময় ছন্দময় কাহিনীর জন্ম নেয় একের পর এক থরের বর্ণনার গুণে। আমাদের চারপাশের চেনা জগত একনিমিষে রঙধনুর সপ্তবর্ণা ত্রান্তীয় অঞ্চলে পরিণত হয়।
নরখাদকদের সাথেও পরিচয় ঘটে তাদের, বাস করতে হয় একই সবুজ উপত্যকায় প্রতিবেশী হিসেবে, গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের জীবনধারা। পান ভবিষ্যৎ গবেষণার পর্যাপ্ত রসদ, যা তাকে ব্যস্ত রাখে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
বইটির শেষ পর্যায়ে এসে ফেলে আসা শহুরে জীবনের টানে উম্মুখ হয়ে পড়েন তরুণ দম্পতি, যতটা না সেই নিরাপদ জীবনের আরাম-আয়েশের জন্য, তার চেয়ে বেশী এখানকার নানা সমস্যার কারণে।
থর ফিরে আসেন নরওয়েতে, রেখে যান তার লিগ্যাসি। আর এক অমূল্য স্মৃতিকথা, যা আমার মত পাঠকদের দিবারাত্রি নিয়ে যায় দক্ষিণের সেই স্বর্গে। ফাতু-হিভার কাছে আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা জীবনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার প্রেরণা দেবার জন্য, নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়বার জন্য, সর্বোপরি জীবনকে ও আমাদের সুন্দর গ্রহটাকে ভালবাসতে শেখাবার জন্য।
tumblr_lbxh93dR8n1qdyd55o1_500 


সুত্রঃhttp://www.sachalayatan.com/tareqanu/43215
বিস্তারিত পড়ুন ... »

বিশ্বের সবচেয়ে বড়/সেরা ৫ সমুদ্রবন্দর


আগেই বলে নেয়া ভাল যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেরা সমুদ্র বন্দরগুলোর বেশির ভাগই চায়নাতে অবস্থিত। আর এগুলো যে শুধু বড় তা নয়; সবচেয়ে ব্যস্থতমও বটে।
আসুন জেনে নেই তাহলে এগুলো বন্দরের খবর।
১। Shanghai (China)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে সবার উপরে অবস্থান। ২০১০ সালের পরিসংখ্যান মতে, একমাত্র এই বন্দর (একইসাথে সমুদ্র এবং নদী) থেকেই ২৯ মিলিয়ন টি ই ইউ হ্যান্ডেল করা হয়েছিল। য গত বছর গুলোর তুলনায় অনেক বেশী।

Yangtze নদীকে ঘিরেই এখানে এত বড় ইকোনমিক সমৃদ্ধি গড়ে উঠেছে।
২। Ningbo-Zhoushan (China)
Ningbo এবং Zhoushan এই দুই যৌথ বন্দরকে ঘিরেই এর নামকরণ করা হয় ২০০৬ সালে। যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে ২য় অবস্থানে আছে।

৩। Singapore
সিংগাপুর বন্দর বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়াতে এখন এই বন্দর বিশ্বের ৩য় অবস্থানে আছে।

সিংগাপুর বন্দরটি ১০০ টির অধিক দেশের ছড়িয়ে থাকা ৬০০ টি বন্দরের সাথে যুক্ত আছে।
৪। Rotterdam (নেদারল্যান্ড)
সারা ইউরোপের একমাত্র বন্দর যা ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। ১৯৬২ – ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই বন্দর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্দর হিসেবে ১ নম্বর স্থানে অবস্থা করেছিল।

৫। Tianjin (China)
এই বন্দরের অবস্থান Haihe নদীর সাথে। বর্তমানে এই বন্দরের সাথে সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ টি দেশের ৪০০ টি বন্দর সংযুক্ত। পুরো চায়নাতে এই বন্দরের অবস্থান ৩য় তে।








সুত্রঃhttp://www.somewhereinblog.net/blog/mahbub154/29539338
বিস্তারিত পড়ুন ... »

সত্যজিৎ এর ফেলুদা ও আমার ভাবনা,সাথে ফেলুদার সকল মুভির ডাউনলোড লিংক


মাঝে বেশ দেখা হয়ে গেলো ফেলুদা বিষয়ক বেশ কয়েকটি মুভি।এর মধ্য আছে রয়েল বেঙ্গল রহস্য,গোরস্থানে সাবধান,টিনটোরেটোর রহস্য,বোম্বাইয়ের বোম্বেটে,কৈলাসে কেলেঙ্কারি,সোনার কেল্লা, বাক্স রহস্য।বাকি আছে শুধু জয় বাবা ফেলুনাথ ।
সেই সব মুভির উপর ভিত্তি করেই একটা সমালোচনা করার দুঃসাহস করলাম।
প্রথমে বলতে গেলে,নির্মাণ শৈলীর দিক দিয়ে সন্দীপ রায় বাণিজ্যিক খানিকটা,হয়তো এখনকার জামানায় এটাই খাটে।কিছু জায়গায় আধুনিক তথা সমসাময়িক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন।উদাহরণ স্বরূপ বলতে গেলে টিনটোরেটোর রহস্য আর গোরস্থানে সাবধানে কাহিনী থেকে সরে আসার অনেক আলামতই পাওয়া যায়।অন্যদিকে সত্যজিৎ সেটার ধারে কাছে না।কারণ তিনি নিজেই একটা ব্রান্ড ছিলেন বৈকি।তবে সন্দীপ রায়ের মেকিং খুব একটা আহামরি লাগেনি।কারণ সত্যজিৎ এমন ভাবেই গল্প সাজিয়েছেন আমার মনে হয় না তাঁর খুব মাথা খাটাতে হয়েছে ফেলুদা নিয়ে।ফেলুদার বাইরে তাঁর সৃষ্টি দেখার অপেক্ষায় আছি।দেখি তিনি নিজের স্বকীয়তায় কি করতে পারেন।
এখন আসি ফেলুদা বা প্রদোষ মিট্টির এ।সৌমিত্র থেকে সব্যসাচী আমার মতে সত্যজিৎ এর ফেলুদার চরিত্রে এঁরাই একবারে আদর্শ।তবে আমার সৌমিত্রের চেয়ে সব্যসাচী কে যথেষ্ট ক্ষুরধার আর সচল,পারফেক্ট মনে হয়েছে।৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা বাঙালী নায়ক পাওয়া আসলে ভাগ্যের ও ব্যাপার বটে।সব্যসাচীর তরুণ বয়সের ফেলুদা অর্থাৎ “বাক্স রহস্যে” যাকে আমরা পাই,বলতে গেলে তার অবয়ব গল্পে পড়া ফেলুদার সাথে একে বাড়েই মিলে যায়। তবে সব্যসাচী ঘোষণাই দিয়ে বসেছেন যে তিনি আর ফেলুদা হচ্ছেন না।গল্পের ফেলুদার তো বয়স বাড়ে না বাস্তবের ফেলুদার তো বয়স বাড়ে বৈকি।এখন দেখার বিষয় এর পরের ফেলু মিত্তির কে হন।
এবার আসি তোপসে তে।সত্যজিৎ এর ফেলুদা গল্পে তোপসে লেখক নিজেই।অর্থাৎ সত্যজিৎ ভাবতেন তিনিই তোপসে।এটা অবশ্য আমি মনে করি।তাঁর লেখায় তোপসে কে যত প্রাণবন্ত আর চৌকস লাগে কোন মুভিতে আজ অব্দই ঐ ভাবে তোপসে কে পাইনি।এটা আসলে সত্যজিৎ থেকে সন্দীপ সকলেরই ব্যর্থতা।এখন মন্দের ভালো খুঁজে হলে বলবো,পরমব্রতকে যা একটু ভালো লেগেছে অভিনয়ে।আর ছোট বেলা বিটিভিতে শাশ্বত চ্যাটার্জির তোপসে চরিত্রে খারাপ লাগেনি।বাক্স রহস্য মুভিটা ( এটা টিভির জন্য বানানো)তে সব্যসাচী আর তোপসের কেম্যাস্ট্রী আমার কাছে সবচেয়ে পারফেক্ট মনে হয়েছে।আর শেষ যে দুটো ফেলুদায় অর্থাৎ গোরস্থানে সাবধান আর রয়েল বেঙ্গল রহস্যে যেই তোপসে কে দেখলাম,ঐটা দেখে পুরোপুরি হতাশই হয়েছি।
এবার বলি জটায়ু কথন।বিভুদা আমার মতে জটায়ু চরিত্রে ভালো ভাবে উৎরে গেছেন।তাঁর সব মুভমেন্ট ফেলুদার মুভিতে শীতল পরশ যোগায়।তবে আমার সব সময়ই মনে হয়েছে এই ফেলুদা আর জটায়ুর মধ্য অদৃশ্য দেয়াল আছে।আর একজন আছেন জটায়ুতে তিনি হচ্ছে রবি ঘোষ।তাঁর অভিনয় আমাকে বাক্স রহস্যে মুগ্ধ করে দিয়েছে।তবে বিভু ভট্টাচার্য রবি ঘোষের কাছে হেরে গেছেন আমার কাছে অন্তত তাই মনে হয়েছে।বিভুদা রয়েল বেঙ্গল রহস্য এর শুটিং ডাবিং শেষ হওয়ার পর মৃত্যু বরণ করেন।ঠিক তেমনি রবি ঘোষ ও কোন এক ফেলুদার শুটিং ডাবিং শেষ করে মৃত্যু বরন করেন।বলতে গেলে কাকতালীয়।তবে এর মধ্য কেমন যেন রহস্য পেলাম।
ভাবনা গুলো একান্ত আমার,মিল অমিল হতেই পারে।ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এখন ফেলুদার আজ অব্দই সকল মুভির ডাউনলোড লিংক দিচ্ছি
সোনার কেল্লা

ডাউনলোড লিংক
বাক্স রহস্য

ডাউনলোড লিংক
Password : lordshaw
জয় বাবা ফেলুনাথ

ডাউনলোড লিংক
বোম্বাইয়ের বোম্বেটে

ডাউনলোড লিংক
কৈলাসে কেলেঙ্কারি

ডাউনলোড লিংক
টিনটোরেটোর যীশু

ডাউনলোড লিংক
গোরস্থানে সাবধান

ডাউনলোড লিংক
রয়েল বেঙ্গল রহস্য

ডাউনলোড লিংক
ডা: মুনসীর ডায়রি


ফেলুদাকে নিয়ে অন্জন দত্ত কবীর সুমনের গান




বিস্তারিত পড়ুন ... »

bdnews24.com - Home

ইরান বাংলা নিউজ

বিবিসি বাংলা

দৈনিক সংগ্রাম