আমার এক ঘনিষ্ট বোকা বন্ধু আজ সন্ধ্যায় মিনতি করে বলেছে, আমি যেন সাহারা
গ্রুপের ব্যবসায়ী উদ্যোগের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চবাচ্য না করি। আমি ভাবলাম,
সে বোধহয় সাহারা গ্রুপের ঢাকা অফিসে চাকুরি টাকুরি নিয়ে ফেলেছে, তাই এই
মিনতি। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মিনতির যে কারণটি সে বলল, তাতে সত্যি সত্যই
চমকালাম। সে বলল, 'দোস্ত, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে তুই যে কোনোদিন গুম
হয়ে যাবি। ইন্ডিয়া এদেশে তাদের স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো কাজ করতে তৎপর।
বারবার ঘু ঘু ধান খেয়ে গেলেও ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ধান খেতে যাস না, পরাণে
বধ হয়ে যাবি।'
আমার চমকাবার কারণ এখানেই। আমি এখনও বিশ্বাস করি না যে ভারতের বিরুদ্ধে একটা কিছু লিখলেই কেউ এই দুনিয়া থেকে নাই হয়ে যেতে পারে। আমার মতো তুচ্ছ লেখকের তুচ্ছ ব্লগ পড়ার মতো সময়ও কোনো বড় মানুষের আছে, এটাও আশা করার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই হয়তো তা-ই ভাবে,নইলে আমার এই বন্ধুটি এরকম করে বলত না। আমি আমার পাঠককে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এই বন্ধুটি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সমর্থক নয়, সুতরাং অভ্যস্ত রাজনৈতিক চিন্তা থেকে এই ভাবনা আসেনি।
ভারত সম্পর্কে এরকম ভীতি যদি ছড়াতে থাকে সেটি সুখের কথা নয়। কিন্তু দিনে দিনে এই ভীতি বাড়ছে, এটাও বোধহয় এক দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এমন হচ্ছে সেটা বিতং করে লেখার আগ্রহ পাচ্ছি না, আমরা সবাই তা কমবেশি জানি। আজকেও জানলাম, কলকাতার জামাই ষষ্ঠিতে যাতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় এজন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় নাকি ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে ফেলেছেন। সুতরাং তিস্তার পানি আসুক কি না আসুক, ফারাক্কার বাঁধে ছোট্ট এক ফাটল নিয়ে মমতা যতই নোংরামি করুন, আমরা দিদিকে জামাই ষষ্ঠির ইলিশ দিতে গাড়ি ঠিকই রওনা করিয়ে দিয়েছি। নিজের দেশের চেয়ে পরের দেশের প্রতি প্রেমটা যে আমাদের বেড়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে সতর্ক হওয়ার কারণ রয়েছে।
যাই হোক, সংক্ষেপে মূল কথায় চলে আসি। আজকে সাহারা গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি সুব্রত রায় সাহারা হোটেল রূপসী বাংলায় তার বাংলাদেশী কোম্পানির শুভ উদ্বোধন করেছেন। বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখবেন শেখ সেলিমের সুযোগ্য পুত্র শেখ ফাহিম। এই নিয়োগ আবার আড়ম্বরের সঙ্গে হয়েছে, অনুষ্ঠানে বিজনেস কার্ড তুলে দেয়া হয়েছে ফাহিমের হাতে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে এদেশে সাহারা গ্রুপের গতি শুধু চলা শুরু করবে না, রীতিমতো দৌঁড়াবে। সে দৌঁড়াক, সবাই ব্যবসা বানিজ্য করে খাক, আমার আপত্তি নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কতটাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সাহারা গ্রুপ? মাত্র ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন তাঁরা। এই যে আবাসন, আইটি, পর্যটন, চিকিৎসা সব ব্যবসায় একেবারে ফর্দাফাই করে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং দেখাচ্ছেন জনাব সাহারা বাবু, এর বাকি টাকা আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশ থেকেই।
সাহারা প্রথমে শুরু করতে চাচ্ছে আবাসন ব্যবসা দিয়ে। গোটা একটা নগর গড়ে তোলার জন্য তাঁরা ৩ লাখ বিঘা জমি চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন নদী ড্রেজিং করে জায়গা তৈরি করে দেয়া সম্ভব। বাপরে বাপ।
যাক গে, আমি এই প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছি না যে জমি যদি দেয়াই যায়, তাহলে সাহারা লাগবে কেন, একটা নগর গড়ে তুলতে তো সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছাই যথেষ্ঠ হওয়ার কথা। কিছুদিন আগে পূর্বাচলের জমি নিয়ে যেমন কাড়াকাড়ি দেখেছি, তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় তেমন নগরী গড়ার উদ্যোগ নিলে এদেশের মানুষের টাকাতেই সেটি তৈরি করা সম্ভব। প্লট বরাদ্দের আবেদনের সময় ভিড়ে ঢাকা শহরে যানজট লেগে যায়। ইনফ্যাক্ট সাহারা তো তা-ই করবে। কইয়ের তেলে কই ভেঁজে আবাসনের ব্যবসা তো এদেশে হচ্ছেই।
তবে এই ব্লগ লেখার কারণ আসলে এসব বকর বকর করা নয়। এই ব্লগ লেখার আসল কারণটি এখন বলি। সুব্রত রায় সাহারার একটা কথা আমার ভালো লাগেনি।
তিনি সুন্দরবনের পাশেও একটা টুরিস্ট নগরী গড়ে তুলতে চেয়েছেন। বিষয়টি যে সুবিধার নয়, সেটি তার নিজের কথাবার্তাতেই আশংকা জেগেছে। তিনি পরিবেশবাদীদের বিষয়ে অত্যন্ত অপমানজনক ভাবে বলেছেন, 'সুব্রত সাহারা বলেন, বেশিরভাগ পরিবেশবাদী শুধু শুধুই ঝামেলা করেন, তারা সমাধান দেন না। শুধু ঝগড়া করেন। তাই সুন্দরবনে পর্যটন সিটিতে তারা বাধা দিলেও সমস্যা হবে না। কারণ তারা অনেকেই তো দোকান খুলে বসে আছেন। ভারতেও তারা অনেক সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।’
আমার ব্লগ লেখার কারণ আসলে এটুকুই। আমি শুধু বলতে চাই, 'এক্সকিউজ মি জনাব সুব্রত বাবু। আপনি সম্ভবত ভুল জায়গায় নক করে ফেলেছেন। সুন্দরবন আমাদের পরিবেশবাদীদের একক সম্পত্তি নয়, এটি আমাদের গোটা বাংলাদেশের সম্পত্তি। আপনি নদী ড্রেজিং করে লাখলাখ একর জায়গায় নগর ফগর তৈরি করছেন, সেটা না হয় আমরা মুখ বন্ধ করে মেনে-ই নেব; কিন্তু সুন্দরবন নিয়ে চুদুর ভুদুর করতে আইসেন না। সুন্দরবন নষ্ট করে টাকা কামানোর কোনো স্বপ্ন যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আজ রাতেই সেটি ভুলে যান। সুন্দরবন নিয়ে কিছু করতে চাইলে ব্যাপারটা হয়তো আপনার জন্য যথেষ্ঠ পরিমান অসুন্দর হয়ে পড়বে। আপনাকে কানে কানে বলে রাখি-সুন্দরবনে কিন্তু বাঘ থাকে।'
এই ফালতু ব্লগটা লেখার উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, নগদা নগদ শুধু এই সতর্কবানীটুকু জারি করে দেয়া।
সুত্রঃhttp://www.amarblog.com/arifjebtik/posts/148053
আমার চমকাবার কারণ এখানেই। আমি এখনও বিশ্বাস করি না যে ভারতের বিরুদ্ধে একটা কিছু লিখলেই কেউ এই দুনিয়া থেকে নাই হয়ে যেতে পারে। আমার মতো তুচ্ছ লেখকের তুচ্ছ ব্লগ পড়ার মতো সময়ও কোনো বড় মানুষের আছে, এটাও আশা করার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই হয়তো তা-ই ভাবে,নইলে আমার এই বন্ধুটি এরকম করে বলত না। আমি আমার পাঠককে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এই বন্ধুটি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সমর্থক নয়, সুতরাং অভ্যস্ত রাজনৈতিক চিন্তা থেকে এই ভাবনা আসেনি।
ভারত সম্পর্কে এরকম ভীতি যদি ছড়াতে থাকে সেটি সুখের কথা নয়। কিন্তু দিনে দিনে এই ভীতি বাড়ছে, এটাও বোধহয় এক দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এমন হচ্ছে সেটা বিতং করে লেখার আগ্রহ পাচ্ছি না, আমরা সবাই তা কমবেশি জানি। আজকেও জানলাম, কলকাতার জামাই ষষ্ঠিতে যাতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় এজন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় নাকি ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে ফেলেছেন। সুতরাং তিস্তার পানি আসুক কি না আসুক, ফারাক্কার বাঁধে ছোট্ট এক ফাটল নিয়ে মমতা যতই নোংরামি করুন, আমরা দিদিকে জামাই ষষ্ঠির ইলিশ দিতে গাড়ি ঠিকই রওনা করিয়ে দিয়েছি। নিজের দেশের চেয়ে পরের দেশের প্রতি প্রেমটা যে আমাদের বেড়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে সতর্ক হওয়ার কারণ রয়েছে।
যাই হোক, সংক্ষেপে মূল কথায় চলে আসি। আজকে সাহারা গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি সুব্রত রায় সাহারা হোটেল রূপসী বাংলায় তার বাংলাদেশী কোম্পানির শুভ উদ্বোধন করেছেন। বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখবেন শেখ সেলিমের সুযোগ্য পুত্র শেখ ফাহিম। এই নিয়োগ আবার আড়ম্বরের সঙ্গে হয়েছে, অনুষ্ঠানে বিজনেস কার্ড তুলে দেয়া হয়েছে ফাহিমের হাতে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে এদেশে সাহারা গ্রুপের গতি শুধু চলা শুরু করবে না, রীতিমতো দৌঁড়াবে। সে দৌঁড়াক, সবাই ব্যবসা বানিজ্য করে খাক, আমার আপত্তি নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কতটাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সাহারা গ্রুপ? মাত্র ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন তাঁরা। এই যে আবাসন, আইটি, পর্যটন, চিকিৎসা সব ব্যবসায় একেবারে ফর্দাফাই করে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং দেখাচ্ছেন জনাব সাহারা বাবু, এর বাকি টাকা আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশ থেকেই।
সাহারা প্রথমে শুরু করতে চাচ্ছে আবাসন ব্যবসা দিয়ে। গোটা একটা নগর গড়ে তোলার জন্য তাঁরা ৩ লাখ বিঘা জমি চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন নদী ড্রেজিং করে জায়গা তৈরি করে দেয়া সম্ভব। বাপরে বাপ।
যাক গে, আমি এই প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছি না যে জমি যদি দেয়াই যায়, তাহলে সাহারা লাগবে কেন, একটা নগর গড়ে তুলতে তো সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছাই যথেষ্ঠ হওয়ার কথা। কিছুদিন আগে পূর্বাচলের জমি নিয়ে যেমন কাড়াকাড়ি দেখেছি, তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় তেমন নগরী গড়ার উদ্যোগ নিলে এদেশের মানুষের টাকাতেই সেটি তৈরি করা সম্ভব। প্লট বরাদ্দের আবেদনের সময় ভিড়ে ঢাকা শহরে যানজট লেগে যায়। ইনফ্যাক্ট সাহারা তো তা-ই করবে। কইয়ের তেলে কই ভেঁজে আবাসনের ব্যবসা তো এদেশে হচ্ছেই।
তবে এই ব্লগ লেখার কারণ আসলে এসব বকর বকর করা নয়। এই ব্লগ লেখার আসল কারণটি এখন বলি। সুব্রত রায় সাহারার একটা কথা আমার ভালো লাগেনি।
তিনি সুন্দরবনের পাশেও একটা টুরিস্ট নগরী গড়ে তুলতে চেয়েছেন। বিষয়টি যে সুবিধার নয়, সেটি তার নিজের কথাবার্তাতেই আশংকা জেগেছে। তিনি পরিবেশবাদীদের বিষয়ে অত্যন্ত অপমানজনক ভাবে বলেছেন, 'সুব্রত সাহারা বলেন, বেশিরভাগ পরিবেশবাদী শুধু শুধুই ঝামেলা করেন, তারা সমাধান দেন না। শুধু ঝগড়া করেন। তাই সুন্দরবনে পর্যটন সিটিতে তারা বাধা দিলেও সমস্যা হবে না। কারণ তারা অনেকেই তো দোকান খুলে বসে আছেন। ভারতেও তারা অনেক সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।’
আমার ব্লগ লেখার কারণ আসলে এটুকুই। আমি শুধু বলতে চাই, 'এক্সকিউজ মি জনাব সুব্রত বাবু। আপনি সম্ভবত ভুল জায়গায় নক করে ফেলেছেন। সুন্দরবন আমাদের পরিবেশবাদীদের একক সম্পত্তি নয়, এটি আমাদের গোটা বাংলাদেশের সম্পত্তি। আপনি নদী ড্রেজিং করে লাখলাখ একর জায়গায় নগর ফগর তৈরি করছেন, সেটা না হয় আমরা মুখ বন্ধ করে মেনে-ই নেব; কিন্তু সুন্দরবন নিয়ে চুদুর ভুদুর করতে আইসেন না। সুন্দরবন নষ্ট করে টাকা কামানোর কোনো স্বপ্ন যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আজ রাতেই সেটি ভুলে যান। সুন্দরবন নিয়ে কিছু করতে চাইলে ব্যাপারটা হয়তো আপনার জন্য যথেষ্ঠ পরিমান অসুন্দর হয়ে পড়বে। আপনাকে কানে কানে বলে রাখি-সুন্দরবনে কিন্তু বাঘ থাকে।'
এই ফালতু ব্লগটা লেখার উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, নগদা নগদ শুধু এই সতর্কবানীটুকু জারি করে দেয়া।
সুত্রঃhttp://www.amarblog.com/arifjebtik/posts/148053
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন