
বহু গুণে গুণান্বিত বিশ্বখ্যাত সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়ের (Carl Linnaeus) আবিস্কার করলেন সমস্ত প্রাণীর নামকরণের এক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যাতে প্রাণীটির পরিবার, প্রজাতি, গণ সম্পর্কে নামের মাধ্যমেই প্রাণীজগতে এর অবস্থান বোঝা যায়। ১৭০৭ সালে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি জীবনের একটি বড় সময় ব্যয় করেছিলেন সারা বিশ্ব থেকে তার কাছে পাঠানো জীবজগতের নমুনার নামকরণে, যাকে আমরা বৈজ্ঞানিক নামে বলে থাকি, যা হয়েছিল মূলত ল্যাটিন ভাষায়। সে গল্পের ব্যপ্তি এবং গুরুত্ব এতই বিশাল যে অন্যদিনের জন্য তোলা থাকল ।
সুইডিশ বিজ্ঞানীটি সারা বিশ্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের জানালেন নমুনা পাঠাবার সময় সাথে স্থানীয় নামটিও পাঠাবার জন্য। যখন বাংলা থেকে তার কাছে সাদা- কালোয় মেশানো অপূর্ব সুন্দর একটি পাখি পৌঁছাল ( যার ভোরের সূর্য উঠানো জাদুময় সুর মূর্ছনা শোনার সৌভাগ্য হল না তার) যার স্থানীয় নাম দোয়েল, তার উচ্চারণে হল ডয়েল, আনমনে ভাবছিলেন ডয়েল, ডায়াল, সান-ডায়াল, হ্যাঁ, পাওয়া গেছে নাম! সূর্যের নামে পাখিটির নাম হল Copsychus saularis । এমন সব চমৎকার ইতিহাস আছে প্রতিটি নামের সাথেই।
সারা বিশ্বের প্রায় ৯০০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১১টির বৈজ্ঞানিক নামের সাথে bengalensis বা বাংলার — পাখি শব্দটি জড়িত আছে। জড়িয়ে আছে বাংলার নাম, চলুন আর শুনি তাদের গল্প, দেখি তাদের মন ভরানো সৌন্দর্য, পরবর্তীতে তাদের দেখবেন বুনো মুক্ত পরিবেশে-
১) বাংলা শকুন, White-rumped Vulture, Gyps bengalensis

বর্ণনা- বাংলা শকুন বিশাল, প্রশস্ত ডানা এবং কালচে দেহের অধিকারী পাখি (দৈর্ঘ্য ৯০ সেমি, ওজন ৪.৩ কেজি, ডানা ৫৫ সেমি, ঠোঁট ৭.৬ সেমি, পা ১১.৬ সেমি, লেজ ২২.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মলিন গলাবন্ধ সাদা এবং দেহ কালচে-বাদামী, কোমর স্পষ্ট সাদা, পালকহীন মাথা ও ঘাড় কালচে ধূসর।
মাথার ওপর দিয়ে ওড়ার সময় সাদা গলাবন্ধ, কালচে দেহ এবং ডানার নিচের দিকের সাদা পালক- ঢাকনি ও ওড়ার-পালকের কালচে পাড়ের পার্থক্য দেখে চেনা যেতে পারে। চোখ হলদে-বাদামী কিংবা ফিকে বাদামী, কালচে হালকা খয়েরি অথবা সবুজ-হালকা খয়েরি, ঠোঁটের ঝিল্লি কালো, মাথা ও ঘাড়ের পালকহীন চামড়া কালচে হালকা খয়েরি, এবং পা ও পায়ের পাতা কালো। ছেলে ও মেয়ের চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কালচে বাদামি দেহ ও ডানার উপরে সূক্ষ সাদা ডোরা রয়েছে। কোমর কালচে ও ডানার পালকের নিচের ঢাকনিতে সরু সাদা টান রয়েছে।
স্বভাব- বাংলা শকুন বনের ধার, গ্রাম, ভাগাড় ও কসাইখানায় বিচরণ করে এবং এরা সবসময় দলবদ্ধ ভাবে থাকে। আহারের খোঁজে এরা আকাশে টহল দেয় অথবা উঁচু গাছ বা দালানে বসে থাকে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মৃত প্রাণী এবং পচা মাংস। খাবার দেখতে পেলে শো শো শব্দে দ্রুত নিচে নেমে আসে, এবং খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে ও কর্কশ গলার ঘড়ঘড়, হিসহিস কিংবা একটানা চিঁচিঁ চিৎকার করে।
সেপ্টেম্বর-মার্চ মাসে প্রজননকালে উঁচু গাছ বা দালানের ভগ্নাবশেষে ডালপালা দিয়ে মাচার মত বাসা বানায় এবং বছরের পর বছর একই বাসা ব্যবহার করে। এ বাসায় মেয়েপাখি একটি সাদা ডিম পাড়ে, ডিমের মাপ ৮.৬ x ৬.৪, ডিম ফুটতে ৪৫ দিন লাগে।
বিস্তৃতি- বাংলা শকুন বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি, সব বিভাগেই দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন, ইরান, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসহ এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা- বাংলা শকুন বিশ্বের মহাবিপন্ন বলে পরিচিত। গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনিক ব্যবহারের ফলে বিগত শতকের সুলভ এই পাখির সংখ্যা ৯৮ % হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে এ প্রজাতিটি এখনও বিপদগ্রস্ত পাখির তালিকাভুক্ত করা হয় নি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা শকুনের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার শকুন! ( Gyps = শকুন, bengalensis= বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি ইনাম আল হকের তোলা।
২) বাংলা নীলকান্ত, Indian Roller , Coracias bengalensis

বর্ণনা- বাংলা নীলকান্ত বাদামি বুক ও নীল ডানার পাখি ( দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওজন ১৬৫ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি)। বসে থাকা অবস্থায় এর পিঠ লালচে বাদামি, উড়ে গেলে ডানার নীল রঙ দেখা যায়, ডানায় পর্যায়ক্রমে ফিকে নীল ও কালচে নীল পালক রয়েছে। গলাবন্ধ, ঘাড়ের পিছনের ভাগ, গলা ও বুক লালচে-বাদামি। কাঁধ-ঢাকনি ও ডানার গোঁড়ার পালক বাদামি জলপাই-সবুজ, তলপেট ও অবসারণী ফিকে নীল এবং লেজ গাঢ় নীল। এর চোখ বাদামি, ঠোঁট বাদামি-কালো, পা এবং পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত অঙ্গ হলদে-বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনুজ্জ্বল, কাঁধ-ঢাকনি মেটে বাদামি এবং গলা ও বুকে ডোরা রয়েছে। ৩টি উপপ্রজাতির মধ্যে C.b.bengalensis এবং সম্ভবত C.b.affinis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব- বাংলা নীলকান্ত পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তদেশ, তৃণভূমি, ক্ষুদ্র ঝোপ, খামার ও গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে। পাতাহীন ডাল, বেড়ার বাঁশ অথবা বৈদ্যুতিক তারে একাকী বসে থাকে। নীরবে বসে এরা ধীরে লেজ ওপর-নিচে দোলায় ও নিচের ভূমিতে শিকার খোঁজে।
আহার্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, টিকটিকি, ব্যাঙ ও সাপ। ঘাসে বা ঝোপে আগুন দেওয়া হলে পোকা ধরার জন্য এরা পাশে বসে অপেক্ষা করে।
এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা উঁচু গলায় ও তীক্ষ সুরে ডাকে- ক্রাক, ক্রাক, ছেলে ও মেয়ে সমবেত ওড়ার মহড়া দেয় এবং গাছের কোটরে অথবা দালানকোঠার ফাঁকফোঁকরে ঘাস এবং খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি, মাপ ৩.৮ x ২.৮ সেমি। ১৭-১৯ দিনে ডিম ফোটে, ২০-২৫ দিনে ছানার শরীরে ওড়ার পালক গজায়,
বিস্তৃতি- বাংলা নীলকান্ত বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি, সকল বিভাগের গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে। পারস্য উপসাগর থেকে পুরো ভারত উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদুর চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা- বাংলা নীলকান্ত বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা নীলকান্তের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার তাউরা ( গ্রীক, Korakias= তাউরা, bengalensis=বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি ইনাম আল হকের তোলা।
৩) বাংলা কাঠঠোকরা,Lesser Goldenback, Dinopium benghalense

বর্ণনা- বাংলা কাঠঠোকরা বাংলাদেশের অতি চেনা কাঠঠোকরা ( দৈর্ঘ্য ২৯ সেমি, ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ১৪.২ সেমি, ঠোঁট ৩.৭ সেমি, পা ২.৫ সেমি, লেজ ৯ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ সোনালী-হলুদ, দেহতলে কালো আইশের দাগ, ওড়ার পালক ও লেজ কালো, থুতনিতে কালো ডোরা, সাদা ঘাড়ের পাশে কালো দাগ, বুকে মোটা কালো আইশের দাগ, চোখে কালো ডোরা, ডানার গোঁড়ার ও মধ্য-পালক ঢাকনিতে সাদা বা ফিকে ফুটকি এবং পিঠ ও ডানার অবশেষ সোনালি। সবুজ গোলকসহ এর ঠোঁট লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা ধূসর সবুজ এবং ঠোঁট শিঙ-রঙ এবং কালোর মিশ্রণ। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় পার্থক্য তাদের চাঁদি এবং ঝুটির রঙে, ছেলেপাখির চাঁদি ও ঝুটি উজ্জল লাল এবং মেয়েপাখির সাদা বিন্দুসহ চাঁদির সামনের অংশ কালো ও পিছনের ঝুটি লাল। তরুণ পাখির অনুজ্জল দেহ ও চাঁদির সামনের ভাগের সাদা বিন্দু ছাড়া দেখতে মেয়েপাখির মত। ৪টি উপপ্রজাতির মধ্যে D.b.bengalensis বাংলাদেশে আছে।

স্বভাব- বাংলা কাঠঠোকরা বন, বাগান ও লোকালয়ে সর্বত্র বিচরণ করে, একাকী, জোড়ায় বা পারিবারিক দলে দেখা যায়। গাছের কাণ্ড ও ডালে হাতুড়ির মত আঘাত করে অথবা মাটিতে ঝরাপাতা উল্টে এরা খাবার সংগ্রহ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া, শুঁয়োপোকা, বিছা, মাকড়শা, অন্যান্য পোকামাকড় এবং ফুল ও ফলের রস।
শক্ত পা ও অনমনীয় লেজে ভর দিয়ে ছোট ছোট লাফ মেরে এরা গাছের কাণ্ড বেয়ে উপরে ওঠে, ওড়ার সময় উচ্চ স্বরে ডাকে- কিয়ি কিয়ি কিয়ি-কিয়ি-কিয়িকিয়িইরররর-র-র-র। ফেব্রুয়ারি- জুলাই মাসে প্রজনন ঋতুতে গাছের কাণ্ডে গর্ত খুঁড়ে বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩টি, মাপ ২.৮ x ২.০ সেমি। ছেলে ও মেয়েপাখির উভয়ই বাসার সব কাজ করে। বাসায় হামলা হলে ছানারা সাপের মত হিসহিস শব্দ করে।
বিস্তৃতি- বাংলা কাঠঠোকরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি, সব বিভাগের সব বনে ও লোকালয়ে রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা- বাংলা কাঠঠোকরা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বলীয়ান ( গ্রিক deinos= শক্তিমান, opos=চেহারা, bengalensis=বাংলার)। পাখিটি বাংলাদেশে শুধু কাঠঠোকরা নামে পরিচিত।
ব্যবহৃত আলোকচিত্র ২টি ইনাম আল হকের তোলা।
৪ ) বাংলা কুবো, Lesser Coucal, Centropus bengalensis

বর্ণনা- বাংলা কুবো পর্যায়ক্রমে পালকসজ্জিত লম্বা লেজওয়ালা কাকের মত পাখি ( দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ১২০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ২.৭ সেমি, পা ৩.৭ সেমি, লেজ ১৮ সেমি)। প্রজনন ঋতুতে পিঠ তামাটে ও দেহতল কালো হয়। অনুজ্জল তামাটে কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই চকচকে কালো। প্রাথমিক ও তৃতীয় সারির পালকের আগা বাদামি এবং লেজ কালো। প্রজননকাল ছাড়া পাখির কালচে বাদামি মাথা ও কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ শরের ডোরা এবং কোমরে কালচে বাদামি ও লালচে ডোরা রয়েছে। দেহতল পীতাভ এবং গলা ও বুকে ফিকে ডোরা আছে, সব ঋতুতেই চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট কালো এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লেট-কালো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানা, মাথার চাঁদি, কাঁধ-ঢাকনি ও পিঠে কালচে বাদামি ডোরা থাকে। ৫ টি উপপ্রজাতির মধ্যে C.b.bengalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব- বাংলা কুবো উঁচু ঘাসের জমি, নল বন, ঘন গুল্ম, ঝোপ ও চা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে চুপিসারে হেঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট ও পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। খাবার তালিকায় ফড়িং ও অন্যান্য বড় পোকা রয়েছে। ওড়ার চেয়ে দৌড়াতে পছন্দ করে। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্ম তৎপর থাকে। দুটি অনুক্রমিক স্বরে ডাকে- কুপ-কুপ-কুপ কুরুক-কুবুক-কুরুক। মার্চ-অক্টোবর মাসে প্রজননকালে পূর্বরাগে ছেলে পাখি লেজ খাড়া করে ও বাকায়। ভূমির কাছাকাছি ঘন ঝোপে পল্লব, পত্র ফলক ও ঘাসের ডগা দিয়ে পার্শ্ব প্রবেশ পথসহ ডিম্বাকার বাসা বানায়। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৪টি, মাপ ২.৮ x ২.৩ সেমি।

বিস্তৃতি- বাংলা কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ঝোপঝাড়ে ও চা বাগানে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীনের দক্ষিনাঞ্চল ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ ব্যতীত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায়।
অবস্থা- বাংলা কুবো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে পরিচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
বিবিধ- বাংলা কুবোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার গজাল-পা ( গ্রিক-kentron= গজালের মত নখর, pous= পা,bengalensis= বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্র ২টি ইনাম আল হকের তোলা।
৫) বাংলা ডাহর, Bengal Florican, Houbaropsis bengalensis

বর্ণনা- বাংলা ডাহর বাংলাদেশে থেকে হারিয়ে যাওয়া বড় আকারের ভূচর পাখি, ( দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি, ওজন ২ কেজি, ডানা ৩৫.৫ সেমি, ঠোঁট- ৩.৭ সেমি, পা ১৭.৫ সেমি)। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে, ছেলের মাথা ও ঘাড় মখমল কালো এবং সাদা ডানার আগা কালো, পিঠের বাকী অংশ কালো ও মেটে থেকে দারুচিনি পীতাভে মিশ্রিত, বুকে এক গুচ্ছ লম্বা পালক, দেহের নিচের দিকে মখমল বাদামি। মেয়েপাখি ছেলে পাখি থেকে আকারে কিছুটা বড়। পীতাভ ভ্রু-রেখা সমেত মাথার চাঁদি ঘন বাদামি ও পিঠে স্পষ্ট বাদামি রঙে কালো তীর-ফলকের দাগ, ঘাড়ের পাশে ঘন বাদামি সরু ডোরা ও দেহের নিচের দিক পীতাভ-সাদা, ডানার পালক ঢাকনি পীতাভ-সাদা ও ওড়ার পালকে বাদামি ডোরা। ছেলে ও মেয়ে পাখি উভয়েরই চোখ হলুদ, ঠোঁট ঘন বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ। ২টি উপপ্রজাতির মধ্যে H.b.bengalensis এককালে বাংলাদেশে ছিল।
স্বভাব- বাংলা ডাহর বাদাবন, বন সংলগ্ন ঝোপের প্রান্তর ও বৃহৎ তৃণভূমিতে বিচরণ করে, ৪-৮টি পাখির ছোট দলে দেখা যায়। ঘাসে ও শস্যক্ষেতে ধীরে হেঁটে এবং ঠুকরে খাবার খায়, খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, টিকটিকি, ছোট সাপ, রসালো ফল, বীজ এবং ঘাসের ও শস্যের কচি ডগা।
ভোর ও গোধূলিতে এরা বেশী কর্মচঞ্চল থাকে এবং দলের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের জন্য ধাতব স্বরে ডাকে- চিক-চিক-চিক। মার্চ- জুন মাসে প্রজনন কালে ছেলেরা লাফ দিয়ে উঁচু ঘাসের উপর ডানা ছড়িয়ে নিজেদের প্রদর্শন করে এবং তৃণভূমির মাটি সামান্য খুঁড়ে ঘাস বিছিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো জলপাই-সবুজ, বেগুনি ফুসকুড়ি ও ফিকে বেগুনি-ধূসর দাগ আছে, সংখ্যায় ২টি, ৬.৪ x ৪.৬ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি- বাংলা ডাহর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি, ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যেত, পাখিটি এখন আর নেই। বর্তমানে নেপাল, উত্তর-পূর্ব ভারত, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা- বাংলা ডাহর বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা ডাহরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার ডাহর ( আরবি hubura= ডাহর, opsis= চেহারা, bengalensis= বাংলার)।
ব্যবহৃত চিত্রকর্ম নেট হতে সংগৃহীত।
৬) বাংলা রাঙাচ্যাগা, Greater Painted Snipe, Rostratula bengalensis
বর্ণনা- বাংলা রাঙাচ্যাগা ছেলেমেয়ের প্রচলিত ভূমিকা উল্টে নেয়া অনন্য জলচর পাখি, ( দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি, ওজন ১২৫ গ্রাম, ডানা ১২.৫ সেমি, ঠোঁট ৪.৪ সেমি, পা ৪.৩ সেমি, লেজ ৪ সেমি)। ছেলের চেয়ে মেয়ে পাখি বেশী রঙ্গিন। অথচ পাখি জগতে এর উল্টোটিই হয় সবসময়, দেখুন পুরুষ পাখির ছবি-

এবং তার সঙ্গিনীর ছবি-

প্রজননকালে মেয়েপাখির পিঠের দিক কালচে ধাতব জলপাই-সবুজ অথবা ব্রোঞ্জ সবুজ, দেহের নিচের দিক সাদা, সাদাটে চোখের বলয়, চোখের পেছনে সাদা দাগ, মাথার চাঁদির ডোরা হালকা পীত বর্ণের। গাল, গলা, ঘাড়র পাশে ও বুক তামাটে কিংবা মেরুন, বুকের নিচের ফিতা কালো এবং দেহতলের শেষাংশ সাদা এবং ওড়ার সময় কালচে পিঠে স্পষ্ট সাদা V চিহ্নিত দাগ দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেপাখির বর্ণবিন্যাস একই ধরনের কিন্তু অনুজ্জল এবং ডানার পালক-ঢাকনিতে এক জোড়া বড় সোনালি-পীতাভ তিলা আছে। ছেলে ও মেয়ে পাখি উভয়ের চোখ বাদামি, লম্বা কমলা-বাদামি ঠোঁট নিচের দিকে সামান্য বাঁকানো, পা জলপাই-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার পালক-ঢাকনি ধূসর ও পিঠের মোটা তিলা ফিকে পীতাভ। ২টি উপপ্রজাতির মধ্যে R.b.bengalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব- বাংলা রাঙাচ্যাগা জলাভূমি, স্যাঁতস্যাঁতে তৃণভূমি ও প্লাবিত ধানক্ষেতে বিচরণ করে, সচরাচর এক, জোড়ায় কিংবা বিচ্ছিন্ন ঝাঁকে থাকে। অগভীর পানিতে হেঁটে ও মাটিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খায়, খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকা, শামুক, চিংড়ি জাতীয় প্রাণী, কেঁচো, বীজ ও শস্যদানা।
ভোর ও গোধূলিতে এরা বেশী কর্মচঞ্চল হয়, ওড়ার সময় ফাঁপা গলায় পুনঃ পুনঃ ডাকে – পৌ—পৌ। জুলাই- সেপ্টেম্বর মাসে প্রজননকালে মেয়েপাখি গোধূলিতে গান গাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণিমাতে পুরো রাত গম্ভীর গলায় পুনঃ পুনঃ গায় উওক—উওক। ( পাখি জগতে সাধারণত ছেলেরাই গান গায়, এটি বিরল ব্যতিক্রম)
ঘাসের গোঁড়ায় ঘাস বিছিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো হলদে, সংখ্যায় ২-৫ টি, মাপ ৩.৬ x ২.৫ সেমি। ছেলেপাখি একাই ডিমে তা দেওয়া ও ছানাপালার কাজ করে, ১৫-২১ দিনে ডিম ফোটে। মেয়েপাখি অন্য ছেলের সাথে মিলিত হইয়ে অন্য বাসায় আবার ডিম পাড়ে।
বিস্তৃতি- বাংলা রাঙাচ্যাগা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উপমহাদেশসহ এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি, তবে ভুটান ও মালদ্বীপে নেই।
অবস্থা- বাংলা রাঙাচ্যাগা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা রাঙাচ্যাগার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বড়ঠুঁটো ( ল্যাতিন rostratus=বড় ঠোঁটের, bengalensis= বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্র ২টি ইনাম আল হকের তোলা।
৭) বাংলা টিকিপানচিল, Lesser Crested Tern, Sterna bengalensis

বর্ণনা- বাংলা টিকিপানচিল কালো ঝুটি ও ধূসর ডানার সামুদ্রিক পাখি ( দৈর্ঘ্য ৪৩ সেমি, ডানা ২৮.৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৩ সেমি, পা ২.৮ সেমি, লেজ ১৩.৫ সেমি)। প্রজনন ঋতুতে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক ফিকে ধূসর, দেহের নিচের দিক একদম সাদা, কপাল, মাথার চাঁদি ও ঝুটি কালো, কোমর ডানা উপরি-ঢাকনি ও লেজের মাঝখানের পালক ধূসর এবং ডানার ওড়ার প্রথম পালক কালচে, ঠোঁট কমলা থেকে কমলা-হলুদ ও চোখ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা কালো এবং পায়ের তলা হলদে থাকে। প্রজননকাল ছাড়া এর কপাল সাদা ও ঠোঁট ফিকে হলদে-কমলা হয়। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কিছুটা বাদামি-ধূসর, দেহের নিচের দিক সাদাটে, ডানার প্রান্ত-পালক কালচে, ডানায় কালচে ডোরা, কাঁধ-ঢাকনি, ডানা-ঢাকনি ও গোড়ার পালকে তিলা রয়েছে। ৩ টি উপপ্রজাতির মধ্যে S.b.bengalensis বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব- বাংলা টিকিপানচিল সাগর তীর, পোতাশ্রয়, জোয়ারীয় খাঁড়ি ও লবণ চাষের জমিতে বিচরণ করে,দলবদ্ধ পাখি ও সচরাচর বিচ্ছিন্ন দলে থাকে, প্রায়ই বাতাসি পানচিলের সাথে দেখা যায়। জলের সামান্য উপরে উড়ে ছোঁ মেরে এদের খাদ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়, খাদ্যতালিকায় প্রধানত রয়েছে মাছ ও চিংড়ি। দৃঢ় ভাবে ডানা নেড়ে উড়ে চলে এবং মাছারাঙ্গার মতই শূন্যে মুহূর্তের জন্য স্থির ভেসে থাকতে পারে, প্রায়ই গভীর সাগরে উড়ে যায়, জলে ঝাপ দেবার আগে সচরাচর ডাকে- ক্রীক- ক্রীক এবং ভয় পেলে উচ্চ শব্দে কিচমিচ করে ডাকে।

মালদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের চরে মে-জুন মাসে প্রজননকালে ছেলেপাখি মেয়েকে মাছ এনে উপহার দেয় এবং মাটিতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম সংখ্যায় ১-২ টি।
বিস্তৃতি- বাংলা টিকিপানচিল বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে পাওয়া যায়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উপমহাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এরা বিস্তৃত তবে নেপাল ও ভুটানে পাওয়া যায় না।
অবস্থা- বাংলা টিকিপানচিল বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা টিকিপানচিলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কমলা রঙের পানচিল ( পুরনো ইংরেজি starn= কমলা, bengalensis= বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্র ২টি ইনাম আল হকের তোলা।
৮ ) বাংলা বাবুই ,Black-breasted Weaver, Ploceus benghalensis

বর্ণনা – বাংলা বাবুই কালো বুক ও মোটা ঠোঁটের ছোট বুননবিদ পাখি ( দৈর্ঘ্য ১১ সেমি, ওজন ২০ গ্রাম, ডানা ৭ সেমি, ঠোঁট ১.৬ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৪ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও ছেলে পাখির চেহারা ভিন্ন। প্রজননকালে ছেলেপাখির মাথার চাঁদি হলুদ, কালচে লম্বালম্বি দাগসহ পিঠের শেষাংশ কালচে বাদামি, কান-ঢাকনি ও গলা সামান্য বাদামি কিংবা সাদা, বুক বরাবর প্রশস্ত কালো ফিতা এবং পেট সাদাটে হয়। প্রজননকাল ছাড়া ছেলে ও মেয়েপাখির পেট পীতাভ, দেহের উপরিভাগের পিছনের অংশ লম্বালম্বি গালকা হলুদ দাগসহ কালচে বাদামি, ভ্রু-রেখা হলুদ, ঘাড়ের পিছনে কালচে রেখা ও ছোট্ট হলুদ পট্টি রয়েছে, কান-ঢাকনি বাদামি, হলুদ গলা ও উপ-গুম্ফ এলাকা কালচে, এবং বুকের কালচে-বাদামি ফিতা অসম্পূর্ণ থাকতে পারে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের চোখ হালকা বাদামি, ঠোঁট ফিকে খয়েরি এবং পা ও পায়ের পাতা হলদে মেটে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি চেহারা মেয়েপাখির মত তবে বুক অপেক্ষাকৃত ফিকে।
স্বভাব- বাংলা বাবুই নল, মৌসুমে প্লাবিত উঁচু ঘাস ও আবাদি জমিতে বিচরণ করে, এরা দলবদ্ধ পাখি এবং সচরাচর ঝাকে থাকে। তৃণভূমি, শস্য-ক্ষেত ও প্রান্তরে এরা খাবার খোঁজে, খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ ও পোকামাকড়।
সচরাচর এরা মৃদু স্বরে পুনঃপুনঃ ডাকে চিট চিট এবং গলা ছেড়ে কোমল কণ্ঠে গায় – সি সি সিসিক সিসিক সিক সিক। ছেলেপাখি গান গায়, মাথা নত করে এবং এর হলুদ ঠোঁট এবং চাঁদি দেখায়। জুন সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন মৌসুমে পানির ধারে উঁচু ঘাস কিংবা নলে পাতা ও ঘাসের সূক্ষ লম্বা ফালি দিয়ে ঝোলানো বাসা বুনিয়ে এরা ২-৪টি ডিম পাড়ে।
বিস্তৃতি- বাংলা বাবুই বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের হাওর এবং বড় পাড়ে পাওয়া যায়। বিশ শতকের মাঝামাঝি কাল পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ছিল এমন তথ্য রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা – বাংলা বাবুই বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা বাবুইএর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বাবুই (গ্রিক plokeus=বাবুই, benghalensis=বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্র নেট হতে সংগৃহীত।
৯) বাংলা ঘাসপাখি, Rufous-rumped Grassbird , Graminicola bengalensis

বর্ণনা- বাংলা ঘাসপাখি একটি ডোরাযুক্ত লালচে-বাদামি পোকা-শিকারি পাখি ( দৈর্ঘ্য ১৬ সেমি, ডানা ৬ সেমি, ঠোঁট ১.৪ সেমি, পা ২.৪ সেমি, লেজ ১৪.৭ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির লালচে-বাদামি পিঠে মোটা কালো লম্বা দাগ থাকে, তবে কোমর ও ডানায় রয়েছে লালচে রঙের দাগ। এর ঘাড়ের পিছনের লম্বা সাদা দাগ কিংবা পীত বর্ণের, ভ্রু-রেখা সাদা, দেহতলের অধিকাংশ সাদা কিন্তু বগল ও বুকের পাশ লালচে-পীত বর্ণের, ঘোর কালচে-বাদামি প্রশস্ত লেজের আগা সাদা, এর অনেকাংশ নিচে থেকে দেখা যায়, চোখ লালচে-বাদামি, পা ও পায়ের পাতা মেটে-বাদামি এবং ঠোঁট বাদামি। ৩ টি উপপ্রজাতির মধ্যে G.b.bengalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব- বাংলা ঘাসপাখি সাধারণত পানির ধারের নল ও উঁচু ঘাসে বিচরণ করে, খুব নিভৃতচারী ও দিবাচর পাখি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া সচরাচর ঘন ঘাসে লুকিয়ে থাকে। ভুম, নলের ঝোপ ও ঘাসে খাবার খোঁজে।
খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়। বিরক্ত হলে অনিচ্ছায় ঘাসের আড়াল ছেড়ে সামান্য উড়ে ঘাসে লুকিয়ে থাকে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া ডাকে- এর- উয়িট-উয়িট-উয়িট। জুলাই-আগস্ট মাসে প্রজননকালে ছেলেপাখি নলের চূড়া থেকে শ্রুতিকটু গান গায় এবং নলের উপর দিয়ে ওড়ার সময় একটু করে গান ধরে।
গভীর জলে দণ্ডায়মান ঘন ঘাসে নলখাগড়া এবং উদ্ভিদের আঁশের উপর সূক্ষ ঘাসের শিকড় বিছিয়ে গভীর বাটির মত বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৪টি, মাপ ১.৭ x ১.৪ সেমি।
বিস্তৃতি- বাংলা ঘাসপাখি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি, প্রধানত সিলেট বিভাগের হাওরের চারপাশের নলে পাওয়া যায় এবং উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল এমন তথ্য আছে। ভারত, নেপাল, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা- বাংলা ঘাসপাখি বিশ্বের প্রায় বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ- বাংলা ঘাসপাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার ঘাসপাখি( ল্যাতিন graminis =ঘাস, bengalensis= বাংলার)
ব্যবহৃত আলোকচিত্র নেট হতে সংগৃহীত।
১০) বাংলা হুতোমপ্যাঁচা, Indian Eagle-Owl, Bubo bengalensis

অতিকায় এই পেঁচাটিকে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে দেখা যায় নি, এমনকি কোন দিন বাংলাদেশে ছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, তবে কাছাকাছি অঞ্চলে হিসেবে ভারতের আসামে বাংলা পেঁচাকে দেখা গেছে। যদি কোনদিন বাংলাদেশে তার আগমনের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাকে নিয়েও অন্যদের মত তথ্যময় ফিচার আসবে আশা রাখি। ব্যবহৃত আলোকচিত্র নেট হতে সংগৃহীত।
১১) Red-cheeked Cordonbleu, Uraeginthus bengalus

এই রূপবান ক্ষুদে পাখিটির নাম বাংলার নামে রাখা হলেও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে পাখিটি আফ্রিকান সাহারা অঞ্চলের! কোন ভাবে বিজ্ঞানীদের ভ্রান্ত ধারণা হয়েছিল যে পাখিটি বাংলার! ব্যবহৃত চিত্রকর্মটি নেট থেকে সংগৃহীত।
সুত্রঃhttp://bornelegant.wordpress.com/2012/05/19/
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন